
ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ সালাম-বরকত হলের পাশে চারুকলা বিভাগের ছয়তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ না করতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন হলটির শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও উক্ত স্থানটি অতিথি পাখির মেইন বার্ডস লেক সংলগ্ন হওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলো কয়েকটি সংগঠন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উক্ত স্থানে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরেও আসলেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় ফের ওই স্থানেই ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি উক্ত স্থানে লাগানো টিনের বেড়া খুলে গাছ লাগিয়ে দেয়। তবে সেই গাছগুলো ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের। উল্টো গাছ লাগানোর ঘটনায় সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হলটির শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, হলের পাশেই ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদে সোমবার (১৯ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে হলটির শিক্ষার্থীরা। প্রায় দুই ঘণ্টার কর্মসূচি শেষে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয় তারা। এসময় উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে উপাচার্য এ বিষয়ে বিকালে একটি মিটিং ডেকে সমাধান করবেন বলে জানান। শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপিতে দুই দফা দাবি জানায়। দাবিগুলো হলোÑ চারুকলা ভবনের স্থান পরিবর্তন করে সালাম-বরকত হল সংলগ্ন এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া এবং চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের উসকানিমূলক আচরণের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট গত ১৭ মার্চ বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী চারুকলা ভবন সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে সিন্ডিকেটের কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু তা লঙ্ঘন করে, প্রশাসন গোপনে পূর্বের সিদ্ধান্ত বাতিল করে আবারও একই স্থানে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়।
এছাড়াও স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা চারুকলা ভবনের প্রকল্প পরিচালক ময়েজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনেন। তারা জানান, ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) তৈরিতে ময়েজউদ্দিন জালিয়াতি করেছেন এবং আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদন ছাড়াই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। তখন শিক্ষার্থীরা বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে পরিত্যক্ত ফজিলাতুন্নেছা হলের কথা বললেও প্রশাসন তা বিবেচনায় নেয়নি। তারা আরও জানান, ভবনের স্থানটি বার্ডস ফ্লাই জোন খ্যাত লেক সংলগ্ন অতিথি পাখির আবাসস্থলও ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ‘ইকোলজিকাল হটস্পট’ হিসেবে পরিচিত এই এলাকা বর্তমানে ধ্বংসের মুখে।
হলের শিক্ষার্থী আনজুম শাহরিয়ার জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। এর আগে প্রশাসন একটি কমিটি করেছে। সেই কমিটিতে আমাদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছিল। ৬/৭ মাস ধরে মিটিং হওয়ার পর আমরা হলের শিক্ষার্থীরা যথাযথ কারণ ও যুক্তি দেখাতে পারায় প্রশাসন ওই স্থান থেকে ভবন সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এখন হঠাৎ এমন কি হলো যে সেই স্থানেই ভবন করার জন্য গোপনে অনুমোদন দেয়া হলো? তাহলে আমাদের সাথে এত মাস ধরে মিটিংয়ের নামে এতো তালবাহানা করা হলো কেন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহম্মদ কামরুল আহসান বলেন, গতকাল এই বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ও শহীদ সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীদের সাথে বিকাল চারটায় মিটিং করার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুনে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে চারুকলা বিভাগ। ভবনের কাজ শুরুর পূর্ব থেকেই মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া যত্রতত্র ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটি পক্ষ। এছাড়া সালাম-বরকত হলের পাশে থেকে সরিয়ে অন্যত্র নির্মাণের দাবি জানায় হলের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বাঁধা আসায় এক পর্যায়ে তৎকালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এনে জোরপূর্বক ভবনের প্রাথমিক কাজ (গাছ কেটে বেড়া দেয়া) শুরু করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানের পরে হলের পাশে আবাসিক এলাকায় অ্যাকাডেমিক এই ভবন বন্ধ করার দাবি জানায় সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া মেইন বার্ডস লেক খ্যাত পাখির ফ্লাইং জোন ধ্বংস না করে ভবন অন্যত্র সরানো ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবি জানায় ছাত্র ইউনিয়নসহ কয়েকটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।
আসিফ