ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাহাড়ি ঢলে ধসে পড়েছে সেতু, গ্রামবাসীর চরম দুর্ভোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ১৯ মে ২০২৫

পাহাড়ি ঢলে ধসে পড়েছে সেতু, গ্রামবাসীর চরম দুর্ভোগ

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ

ভারতের পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণে ধসে পড়েছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের লালকুড়া জিঞ্জিরাম নদীর উপর নির্মিত কাঠের সেতুটি। 

শনিবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় সেতুটির পূর্বপারের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, নদীর এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট বিপ্লব হাসান পলাশের উদ্যোগে। সরকারি বরাদ্দে প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ হলেও এতে ব্যবহৃত হয় নিম্নমানের কাঠ ও খুঁটি। নির্মাণের এক বছরের মধ্যেই কাঠগুলো নড়বড়ে ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত পাহাড়ি ঢলের তোড়ে তা ধসে যায় নদীতে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, এটি প্রকৌশলগত কোনো পরিকল্পনা ছাড়া, দায়সারা মানের একটি নির্মাণকাজ ছিল। কোনো টেকসই কাঠ বা স্ট্রাকচার ব্যবহার করা হয়নি। যার ফলাফল আমরা এত দ্রুতই দেখতে পেলাম।

একই চিত্র রাজিবপুর-রৌমারীর আরও অনেক সেতুতে। এটি কোনো একক ঘটনা নয়। রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যে সকল কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই একইভাবে নিম্নমানের নির্মাণকাজের কারণে বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একাধিক সেতু ইতোমধ্যেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, যা জনদুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

সেতু ভেঙে যাওয়ার ফলে বিকল্প কোনো নিরাপদ পথ না থাকায় গ্রামবাসীদের এখন নদী পার হতে হচ্ছে ছোট নৌকা, বাঁশের ভেলা কিংবা কাঁধে পণ্য নিয়ে হেঁটে। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষার্থী, অসুস্থ রোগী, নারী ও বৃদ্ধরা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, দ্রুত টেকসই সেতু নির্মাণ করুন।

যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, “ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় আমাদের ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে। আমরা চাই, জরুরি ভিত্তিতে এখানে অস্থায়ী সেতু স্থাপন এবং দীর্ঘমেয়াদে একটি টেকসই কংক্রিট সেতুর ব্যবস্থা করা হোক।”

এলাকাবাসীর মতে, শুধু মাত্র কাঠের সেতু নয়- এই অঞ্চলের সকল অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজে গুণগত মান বজায় রাখতে হবে। প্রতি বছর পাহাড়ি ঢল ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই অঞ্চলের বাস্তবতা। তাই অস্থায়ী নয়, দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দরকার।

তারা আরও বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব এই সেতু নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। তা না হলে বর্ষা মৌসুমের বাকি সময়টা আমাদের জন্য ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াবে।”

মিরাজ খান

×