
ছবি: প্রতীকী
মায়ের চেয়ে আপন আর কেউ নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর শব্দটি “মা”। কবির ভাষায়, ‘যেখানে দেখি যাহা, মায়ের মতো আহা, একটি কথায় এতো শুধা মেশা নাই।’ জগৎসংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মাঝে যে মানুষটির একটু সান্ত্বনা আর স্নেহ-ভালোবাসা আমাদের সব বেদনা দূর করে দেয়, তিনি হলেন মা। প্রতিটি মানুষের পৃথিবীতে আগমন ও বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা একমাত্র মায়ের। মায়ের তুলনা অন্য কারো সঙ্গে হয় না।
ইসলাম মা-বাবাকে সর্বোচ্চ অধিকার ও সম্মান দিয়েছে। ইসলামের বিধান অনুযায়ী, আল্লাহ তায়ালার পরেই মা-বাবার স্থান।
এ প্রসঙ্গে মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে বলা হয়েছে— “তোমরা তাঁর ইবাদত ছাড়া অন্য কারোর ইবাদত করো না, পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয়েই বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহলে তাদেরকে ‘উহ্’ বলো না এবং ধমকের সুরেও জবাব দিও না; বরং সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে কথা বলো।” (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত : ২৩)
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের অন্যত্র বলেন— “তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো।” (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৬)
আরও বলা হয়েছে— “আমি (আল্লাহ) নির্দেশ দিয়েছি, তারা যেন পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে, কষ্টসহকারেই প্রসব করেছে এবং লালন-পালন করেছে।” (সুরা আহকাফ, আয়াত : ১৫)
পিতা-মাতার অধিকার নিয়ে হাদিসে বহুবার বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত— এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জানতে চায়, “হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার উত্তম আচরণের সবচেয়ে বেশি হকদার?” তিনি বলেন, “তোমার মা।”
সে আবার বলে, “তারপর কে?”
তিনি বলেন, “তোমার মা।”
সে আবার বলে, “তারপর কে?”
তিনি বলেন, “তোমার মা।”
সে বলে, “এরপর কে?”
তিনি বলেন, “তোমার পিতা।” (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরও বলেন, “জান্নাত মায়ের পদতলে।” (সহিহ মুসলিম)।
তিনি আরও বলেন— “তিনটি দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়: মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া এবং সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া।” (তিরমিজি)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, “তোমার মা-বাবাই তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২১)
অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, “যখন কোনো অনুগত সন্তান তার পিতা-মাতার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকায়, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন।” (সুনানে বাইহাকি)
আরও বলা হয়েছে— “দয়া ও কোমলতা সহকারে পিতা-মাতার সামনে বিনম্র হও এবং দোয়া করো এভাবে: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার পিতা-মাতার প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা দিয়ে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’” (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত : ২৪)
মায়ের সঙ্গে সন্তানের নাড়ির সম্পর্ক। সামান্য আঘাত পেলেই সবাই ‘মা’ বলে চিৎকার করে ওঠে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছেই তার মা অমূল্য। শুধু মানুষ নয়—পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণিই তার মায়ের কাছে ঋণী। সে ঋণ শোধের কোনো উপকরণ আল্লাহ এই দুনিয়ায় সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে মা-বাবার উত্তম সন্তান হওয়ার তাওফিক দান করুন। পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আমিন।
শহীদ