ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গার্মেন্ট খাতে কর্মসংস্থান কমছে না বরং বাড়ছে, বিভ্রান্তিকর বিশ্লেষণে সতর্ক থাকার আহ্বান প্রেস সচিব শফিকুল আলমের

প্রকাশিত: ০১:০৮, ২০ মে ২০২৫; আপডেট: ০১:০৯, ২০ মে ২০২৫

গার্মেন্ট খাতে কর্মসংস্থান কমছে না বরং বাড়ছে, বিভ্রান্তিকর বিশ্লেষণে সতর্ক থাকার আহ্বান প্রেস সচিব শফিকুল আলমের

ছবিঃ সংগৃহীত

গার্মেন্ট খাতে কর্মসংস্থান কমছে না বরং বাড়ছে, বিভ্রান্তিকর বিশ্লেষণে সতর্ক থাকতে বললেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার পোস্টে লিখেছেন, সমাজে সম্মানিত কলামিস্ট হলেও প্রথম আলোতে মাহা মির্জার সাম্প্রতিক একটি কলামে তিনি চাকরি হারানোর বিষয়টিকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। মাহা মির্জার লেখা নিবন্ধে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সংকুচিত হচ্ছে এমন একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যেখানে তিনি কিছু বাছাইকৃত তথ্যের মাধ্যমে বাস্তবচিত্রকে আড়াল করেছেন।

আসলে কী বলছে বাস্তবতা?

শফিকুল আলম বলেন, গত ১৫ মাসে বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা তিনি উপেক্ষা করেছেন। প্রথম আলোতেই এপ্রিলের মাঝামাঝি একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ে অন্তত ১২৮টি নতুন পোশাক কারখানা স্থাপিত হয়েছে, যেগুলোর পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন শুরু হলে প্রায় ৭৪,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩২.৬৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৯.৬৭ বিলিয়ন ডলার। এই গতি বজায় থাকলে ২০২৫ অর্থবছরের শেষ নাগাদ রপ্তানিতে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গার্মেন্ট রপ্তানিতে প্রতি ১ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধির বিপরীতে সরাসরি প্রায় ১ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। সেই হিসেবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে শুধুমাত্র সরাসরি ৪ লাখ নতুন চাকরি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে পরোক্ষভাবে তৈরি হওয়া হাজার হাজার কর্মসংস্থান—যা পরিবহন, প্যাকেজিং, কাঁচামাল ও সেবা খাতকে ঘিরে গড়ে উঠছে।

প্রেস সচিব বলেন, সত্য যে, কিছু গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে—এর মধ্যে কয়েকটি ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট মালিকদের। প্রায় ডজনখানেক কারখানা বন্ধ হয়েছে মালিক গ্রেফতার বা দেশত্যাগ করায়। আবার অনেক অদক্ষ কারখানা গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনের পরিবর্তনে টিকে থাকতে না পেরে বন্ধ হয়েছে।

তবে ২০০০ সালের শুরুর দিকে যেখানে গার্মেন্ট কারখানার সংখ্যা ছিল ৪,৫০০ এর বেশি, তা কমে এখন ৩,০০০-এর নিচে নেমে এলেও এর মানে শিল্প খাতে ধস নয়। বরং এটি একটি কনসোলিডেশন ট্রেন্ড—অদক্ষ, ক্ষুদ্র কারখানা বন্ধ হয়ে দক্ষ, বড়, সমন্বিত কারখানাগুলোর উৎপাদন ও রপ্তানিশক্তি বাড়ছে।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশের পুরো গার্মেন্ট খাত যেখানে ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করত, আজ Ha-Meem Group-এর মতো একটি প্রতিষ্ঠান একাই সে পরিমাণ রপ্তানি করছে।

দাম সংক্রান্ত চাপে সামনে হয়তো আরও কিছু কারখানা বন্ধ হবে, তবে দক্ষ ও ভ্যালু-চেইনে সংযুক্ত বড় কারখানাগুলো বিস্তার ঘটাবে। এতে একদিকে কর্মসংস্থান বাড়বে, অন্যদিকে রপ্তানি আয়ের নতুন মাইলফলক গড়া সম্ভব হবে।

বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে Pran-RFL বর্তমানে প্রায় ১.৫ লাখ কর্মী নিয়োজিত রেখেছে। আগামী কয়েক বছরে এই সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছানোরও সম্ভাবনা রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের দেশে হয়তো কারখানার সংখ্যা কমে যাবে, কিন্তু যেগুলো থাকবে, সেগুলো হবে Foxconn-এর মতো বড় ও একীভূত শিল্প প্রতিষ্ঠান

সবশেষে তিনি বলেন, আমাদের শিল্প খাত নিয়ে বিশ্লেষণ করার সময় শুধুমাত্র নেতিবাচক দিক তুলে না ধরে, এর বৃহত্তর রূপান্তর ও উন্নয়নের ধারাকেও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। বাছাই করা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তিকর চিত্র উপস্থাপন না করে, একটি সুসংহত ও ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্লেষণ সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অধিক কার্যকর।

সূত্রঃ https://www.facebook.com/share/p/16FotjEq1H/

ইমরান

আরো পড়ুন  

×