ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সংস্কৃতি সংবাদ

সালাহউদ্দিন আহমেদের ক্যানভাসে মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:০৭, ২০ মে ২০২৫

সালাহউদ্দিন আহমেদের ক্যানভাসে মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে দেব্রিস শীর্ষক প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা

গোটা বিশ্ব যেন অস্থিরতায়  ভুগছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিরাজ করছে মানবসৃষ্ট নানামুখী সংকট। শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে সংঘাতে লিপ্ত হতে হচ্ছে একে অপরের বিরুদ্ধে। যুদ্ধের ভয়াবহতায় আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। হিংসাত্মক তৎপরতায় ঝরে পড়ছে নারী-শিশু থেকে নিরীহ মানুষের প্রাণ।

বোমার আঘাতে ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে লাখো মানুষ। আর এই ধংসাত্মক প্রবণতা প্রবলভাবে ছাপ ফেলেছে চিত্রশিল্পী কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদের মননে।  শান্তিময় পৃথিবীর আকাক্সক্ষার সেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনাকে মেলে ধরেছেন ক্যানভাসে। রং ও রেখার আঁচড়ে ব্যথাতুর হৃদয়ের প্রকাশ ঘটিয়েছেন চিত্রপটে। সেসব ছবি নিয়ে ফরাসি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র  আলিঁঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী। শিল্পায়োজনটির শিরোনাম ‘দেব্রিস’।    
এই প্রদর্শনীতে অ্যাক্রিলিক মাধ্যমে চিত্রিত ত্রিশটি চিত্রকর্ম ঠাঁই পেয়েছে, যা শিল্পীর সাম্প্রতিক শিল্প-অনুসন্ধানকে তুলে ধরে। শিল্পী কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন এবং বর্তমান সময়ে সিরিয়া, রাশিয়া, কাশ্মীর ও মিয়ানমারের মতো অঞ্চলে মানবসৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষী হয়েছেন। ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের লোভে পরিচালিত এই মানবিক বিপর্যয় তার দৃষ্টিভঙ্গিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।  

কয়েক দশক ধরে এই অভিজ্ঞতাগুলো তার শৈল্পিক যাত্রায় একটি স্থায়ী ছাপ ফেলেছে, যা তার কাজের বিষয়বস্তু এবং চিত্রকর্মে প্রকাশিত আবেগকে প্রভাবিত করেছে। প্রদর্শনীটি প্রসঙ্গে শিল্প সমালোচক মুস্তাফা জামান প্রদর্শনীটি বলেন, এটি যেন বাস্তব ও আবেগিক ধ্বংসাবশেষের এক শিল্পিত বয়ান। গাজা শহরের ধ্বংসযজ্ঞ, কাশ্মীরের মানুষের চলমান দুর্ভোগ কিংবা কক্সবাজারের ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জীবনের হতাশাÑসবকিছুই আমাদের মানসপটকে আলোড়িত করে।

ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের ব্যর্থতার ইতিহাসও পেছনে ফেলা কঠিন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বপ্ন চিরকালই এক মরীচিকা। দমনমূলক শাসনের পতন আমাদের একটি নতুন ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে উদ্বুদ্ধ করলেও  বাস্তবে  যেন সবকিছু  ভেঙে পড়ে আছে এবং আমরা কেবল আবেগিক ধ্বংসাবশেষই আঁকড়ে ধরে আছি। আমরা এমন এক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আছি যেখানে আমাদের সামষ্টিক স্বপ্নের কাঠামো  ভেঙে পড়ছেÑএই কারণেই প্রদর্শনীর নাম ‘দেব্রিস’।
আগামী ৩১  মে  পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। 
প্রসঙ্গত, কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ ১৯৮৭ সালে তার প্রথম একক প্রদর্শনী আয়োজন করেন। তিনি  দেশ-বিদেশে প্রায় ৩০টি একক প্রদর্শনী করেছেন এবং বহু দলীল প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। সেই সুবাদে বাংলাদেশ ছাড়াও তার প্রদর্শনীর পরিসর বিস্তৃত হয়েছে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, ইরান ও  প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ায়।

×