
ছবি: জনকণ্ঠ
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার যমুনা বিধৌত সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেঝেতে জমেছে ধুলার স্তর। ব্যবহৃত মাস্ক, টিস্যু, কাগজের টুকরো, ফলের খোসা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। দেয়ালে থুতু ও পানের পিকের দাগ। গোসলখানা ও শৌচাগারগুলো অস্বাভাবিকভাবে নোংরা। শয্যার চাদরগুলোও অপরিচ্ছন্ন। দেখে মনে হয়, এটি কোনো আধুনিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়।
চারপাশের পরিবেশ এতটাই নোংরা ও দুর্গন্ধময় যে টিকে থাকাই দায়। মোছাঃ রোজিনা খাতুন, বেলকুচি উপজেলার ঠাকুরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা, তাঁর অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তিনি বলেন, “টয়লেটের কথা কী বলবো! গেলেই বমি চলে আসে। নাক-মুখ চেপে ধরেও যাওয়া যায় না। এ অবস্থায় একজন সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়বে।”
২০১৫ সালে ৮৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে শহরের পাশের শিয়ালকোল এলাকায় ৩০ দশমিক ৯০ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত হয় শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যার এই হাসপাতাল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পচা রক্তের ব্যাগ, রক্তমাখা ব্যান্ডেজ, নোংরা কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল, ও ড্রেসিং ও অপারেশনে ব্যবহৃত গজ-তুলাসহ বর্জ্য। টয়লেটগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। নির্ধারিত কোনো ডাস্টবিন না থাকায় রোগী ও স্বজনরা যেখানে-সেখানে খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলছেন।
এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী, স্বজন, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দুর্গন্ধে আমরা নাকাল হয়ে উঠলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নীরব। তাদের উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালের পরিবেশ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।”
ভুক্তভোগীরা বলছেন, “হাসপাতালের চারদিকে ছড়িয়ে থাকা ময়লা ও দুর্গন্ধের কারণে এটি স্বাস্থ্য ঝুঁকির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সুস্থ হতে এসে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছি আমরা।” এ বিষয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্স মোছাঃ সালমা খাতুন বলেন, “এখানে রোগী অনেক, কিন্তু পরিচ্ছন্নতাকর্মী খুবই কম।”
হাসপাতাল পরিচালক ডা. এ টি এম নুরুজ্জামান বলেন, “আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় জনবল অপ্রতুল। তাই হাসপাতাল পুরোপুরি পরিষ্কার রাখা একটু কষ্টসাধ্য।” তিনি আরও বলেন, “বিছানার চাদরের কোনো ঘাটতি নেই। কেন নিয়মিত বদলানো হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা হবে।”
শহীদ