ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরাইলে ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন আরিফাইল শাহী জামে মসজিদ

রিমন খান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ১৯ মে ২০২৫

সরাইলে ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন আরিফাইল শাহী জামে মসজিদ

ছবি: জনকন্ঠ

১৬৬২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত মোগল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন আরিফাইল শাহী জামে মসজিদ। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের আরিফাইল গ্রামে অবস্থিত।

এই মসজিদটি আয়তনে লম্বায় ৮০ ফুট প্রস্থে ৩০ ফুট। দেয়ালের পুরুত্ব ফুট ইঞ্চি। এটি মুঘল আমলের অপরূপ স্থাপত্য শৈলীর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাচীন স্থাপত্যকলা অপূর্ব নির্মাণশৈলীর মসজিদটি দেখতে অনেকটা তাজমহলের মতো। ৩৫০ বছর পূর্বে নির্মিত মসজিদটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ন নিদর্শন। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের অধীন মসজিদটি প্রত্ন সম্পদ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।

মসজিদটির মোট প্রবেশপথ পাঁচটি। যার তিনটি হলো পূর্বদিকে এবং বাকি দুটি যথাক্রমে উত্তর পূর্বদিকে। মসজিদের চার কোনায় চারটি বুরুজ রয়েছে। এটিতে মোট তিনটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজগুলোর নিচে মসজিদের অভ্যন্তরভাগে তিনটিবেরয়েছে যা ভেতরের অংশকে তিন ভাগে ভাগ করেছে। গম্বুজগুলোতে পদ্মফুল অঙ্কিত রয়েছে। মসজিদের দেয়ালের বাইরের দিকটি চারকোনা খোপ দিয়ে সজ্জিত।

মসজিদটিকে নিয়ে অনেক কল্পকাহিনীও রয়েছে। মসজিদটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই আরিফাইল গ্রামে আসেন। মসজিদটির পাশেই বিশাল আয়তনের একটি দীঘি অবস্থিত। যার নাম সাগর দীঘি। মসজিদটির দক্ষিণে রয়েছে দুটি কবর, যাজোড়া কবরবারহস্যময় কবরনামে পরিচিত। স্থাপত্য কলা অপূর্ব নির্মাণশৈলীর ক্ষেত্রে কবরদ্বয় মসজিদটির চেয়ে কোনো অংশে কম যায় না।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, একসময় ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী সরাইল বারো ভূঁইয়ার একজন ঈশা খাঁর শাসনে ছিল। ওই সময় ঈশা খাঁ মসজিদ পার্শ্ববর্তী জোড়া কবর নির্মাণ করেন। একাধিক ঐতিহাসিক মত প্রকাশ করেন। অন্য একটি অংশের মতে, ঈশা খাঁর দুই স্ত্রীর সমাধিসৌধ হলোজোড়া কবর

অবশ্য স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে দরবেশ শাহ আরিফ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং তার নামানুসারে এই মসজিদের নামকরণ করা হয়। অনেকের ধারণা, কবর দুটির প্রকৃত তথ্য অনাবিষ্কৃত। নানা কারণে জোড়া কবর রহস্যাবৃত। রহস্যে অনেকটা প্রভাব রেখেছে কবর দুটি থেকে নিচে অনেক গভীরে যাওয়া একটি সুড়ঙ্গ। যার শেষ কোথায়- ধারণা নেই কারো। ভয়ে অন্ধবিশ্বাসের কারণে কেউ সুড়ঙ্গের শেষ আবিষ্কার করার চেষ্টা করে না বলে তা এখনো রহস্যময় রয়ে গেছে।

মসজিদটিতে ঢুকে দেখা গেছে ভেতরকার যে কোনো শব্দ দেয়ালের অতিপুরুত্বের কারণে বাধা পেয়ে একটি ভৌতিক প্রতিধ্বনিত রূপে ফিরে আসে। এই প্রতিধ্বনিকে অনেকেই গায়েবী কোনো আলামত মনে করেন। প্রাচীন এই মসজিদটিকে গায়েবি মসজিদ হিসেবে আখ্যায়িত করে বর্তমানে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা তাদের মনোবাসনা পূরন করার জন্যে এই মসজিদে এসে নামাজ পড়েন।

বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল বিশ্বরোড এসে সিএনজি বা রিক্সা যোগে সরাসরি যাওয়া যায় এই মসজিদে। উপজেলা চত্বর থেকে পায়ে হেটেও যাওয়া যায়

মুমু

×