ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভিসার চেয়ে দামি সান্ডা, মরুভূমির টিকটিকি এখন প্রবাসীর প্রেম!

মোঃ রিজভী আহম্মেদ রিজোয়ান, নওগাঁ।

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ১৮ মে ২০২৫

ভিসার চেয়ে দামি সান্ডা, মরুভূমির টিকটিকি এখন প্রবাসীর প্রেম!

মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে একটি টিকটিকি সদৃশ প্রাণী—সান্ডা। মরুভূমিতে ছুটতে থাকা কিছু প্রবাসীর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই শুরু হয় এই প্রাণী নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, কৌতুক ও কৌতূহল। কেউ বলছেন, “সান্ডা ধরলে চাকরি পাকা”, কেউ আবার বলছেন, “ভিসা রিনিউ করার শর্তই নাকি সান্ডা শিকার!”

‘সান্ডা’ মূলত Uromastyx hardwickii প্রজাতির একটি মরুভূমি-বাসী সরীসৃপ। দেখতে বড় আকৃতির টিকটিকির মতো হলেও এর লেজ মোটা ও কাঁটাযুক্ত। এটি মূলত ভারত, পাকিস্তান ও আরব অঞ্চলের শুকনো, পাথুরে ভূমিতে বাস করে।

অনেক দেশে সান্ডা চর্বি থেকে তৈরি তেল ‘ঔষধি’ হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে প্রচলিত রয়েছে। বিশেষ করে যৌন দুর্বলতা নিরসন, বাতব্যথা ও পেশি শক্তি বৃদ্ধির জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। যদিও এসব দাবির পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো পর্যন্ত উপস্থাপন করা যায়নি।
কয়েক মাস আগে মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে কাজ করা কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিক একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে দেখা যায় তারা দলবেঁধে একটি সান্ডা ধরার জন্য ছুটছেন। এক প্রবাসী রসিকতা করে বলেন, “ভাই, সান্ডা না ধরলে কোম্পানি বেতন দিবে না!” ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

এরপর একের পর এক ভিডিও, মিম, সংলাপ ছড়িয়ে পড়তে থাকে ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউবে। “সান্ডা ধরলেই প্রোমোশন”, “ভিসার জন্য সান্ডা জরুরি”—এমন ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য ঘুরে বেড়াতে থাকে হাজারো নেটিজেনের টাইমলাইনে।

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী, বিদেশি বন্যপ্রাণী দেশে আমদানি, বিক্রয় ও পোষা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক  মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, “সাম্প্রতিক সময়ে কিছু প্রবাসী সান্ডা নিয়ে দেশে আসার চেষ্টা করছেন, এমন খবরে আমরা শুল্ক কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছি। অনলাইন ট্রেন্ড দেখে কেউ যাতে এটি দেশে আনার চেষ্টা না করে, সে জন্য প্রচারও চালানো হচ্ছে।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক  ডাঃ রুমানা আফরোজ এক বিবৃতিতে বলেন, “সান্ডা তেল নিয়ে প্রচলিত অনেক কিছুই ভ্রান্ত ধারণা। আধুনিক চিকিৎসায় এর কোনো স্বীকৃত ব্যবহার নেই। বরং এসব অবৈজ্ঞানিক উপাদান ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে।”

একটি টিকটিকি সদৃশ প্রাণী কীভাবে একটি জাতির হাজারো মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এলো, তা যেমন হাস্যকর, তেমনি চিন্তারও। প্রবাসীদের বাস্তব জীবন, মিম কালচার, চিকিৎসার গুজব ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ—সব কিছু মিলিয়ে ‘সান্ডা’ এখন শুধুই একটি সরীসৃপ নয়, বরং একটি সামাজিক প্রতিচ্ছবি।

রিফাত

×