
কক্সবাজারে এ বছর ধানের ভালো ফলন হয়েছে।আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে ও বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। লাভের আশায় দিন গুনছেন তারা। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন মাঠে ধান কাটা প্রায় শেষ। এখন মাড়াই,ঝাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত কৃষকরা।
স্থানীয়ভাবে প্রতি কানিতে (৪০শতক) ১০০০ কেজি থেকে ১৫০০ কেজি ধানের ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। চাষিরা জমি থেকে মাড়াইয়ের পরে দুই বার রোদে শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। যা বিগত বছরের তুলনায় বেশি ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় বেশ খুশি চাষিরা।জেলায় প্রায় শতভাগ ধান কেটে কৃষকরা ঘরে তুলেছেন।সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহিদ হাসান বলেন, এ বছর বৈশাখ মাসে তেমন ঝড়-বৃষ্টি হয়নি আর বিদ্যুতের লোডশেডিংও তেমন না হওয়ায় কৃষকরা সঠিক মাত্রায় সেচ দিতে পেরেছে। তাই ফলন ভালো হয়েছে।
সদর উপজেলার ঝিলংজার কৃষক সুরত আলম বলেন, ৩ কানি (১২০ শতক) জমির ধান মাড়াই করে ৩৬০০ কেজি ফলন পেয়েছেন। চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের চড়িবিল গ্রামের কৃষক বলেন, তার ২ কানি জমিতে ৪৪০০ কেজি ও অপর এক বিঘা জমিতে ১৫০০ কেজি ধানের ফলন হয়েছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দৈইংগ্যাকাটা গ্রামের কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, ১ একর জমিতে ব্রী ধান ১০৮ জাত চাষ করে ৩৪০০ কেজি ফলন পেয়েছেন।
কৃষি তথ্য সার্ভিস কক্সবাজারের কর্মকর্তা মোঃ লোকমান হাকিম বলেন,বর্তমানে কৃষকরা অনেক সচেতন।প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদে আগ্রহী ও কৃষি বিভাগের সকল স্তরের কর্মকর্তাদের পরামর্শ এবং সহযোগিতার জন্যে ফলন খুব ভালো হয়েছে। জেলার ৯ উপজেলায় সোনালী ধানের মাঠে ধান কাটার শেষ প্রান্তে পৌঁছেছেন কৃষকেরা। কৃষকের উঠোনে উঠোনে এখন ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। শেষ সময়ের বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়া এর আশংকায় কৃষকরা মাঠ থেকে ধান মাড়াই করে নিতে দিন রাত কাজ করছে। বেশি পরিশ্রম করে ফলন বেশি হবার কারনে কৃষকরা বিগত বছরের চেয়ে এবার অনেক খুশি, যেহেতু ধানের ফলন হয়েছে বাম্পার। আবার গো খাদ্যের জন্য কৃষকরা খড় ও বাড়িতে নিতে পেরেছে। এ সময়ে সাগরে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ধান কাটার শ্রমিক ছিল বেশি এ কারনে কৃষকদের বোরো ধান ক্ষেত থেকে কাটতে বাড়িতে আনতে তেমনটা বেগ পেতে হয়নি।কৃষকরা বলছেন, এবার ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে কম খরচে চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। যদি বাজারে দাম ঠিক থাকে, তাহলে এই ধান আমাদের পরিবারের সচ্ছলতা আনবে।
কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় মোট ৫৫ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৮৬৯ হেক্টর, রামু ৬ হাজার ৬৪০ হেক্টর, ঈদগাহ ৩ হাজার ৪৬ হেক্টর, উখিয়া ৬ হাজার ৪৭৫ হেক্টর, টেকনাফ ১ হাজার ৮০০ হেক্টর,মহেশখালী ৭ হাজার ৩০ হেক্টর, চকরিয়া ১৭ হাজার ৬৯০ হেক্টর, পেকুয়া ৭ হাজার ৩৬০ হেক্টর,কুতুবদিয়া উপজেলায় ১ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে জেলায় মোট ৫৫ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.বিমল কুমার প্রামানিক বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, সার-কীটনাশকের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা ও কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক তদারকির কারনে ভালো ফলন হয়েছে। তবে ধানের আধাপাকা অবস্থায় কোন কোন জায়গায় ধানের শীষ ব্লাস্ট, পাতা পোড়া রোগ ও বাদামী ঘাস ফড়িং এর আক্রমণ দেখা দিলে তা ২-১ দিনের বৃষ্টিতে ধানের জন্যে অনেক ভাল ফল বয়ে আনে।
নোভা