ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অজানা নির্মাণশৈলীতে দাঁড়িয়ে আছে ৫০০ বছরের রাজশাহীর কিসমত মারিয়া মসজিদ

তানভীরুল আলম তোহা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ০০:৫৯, ২০ মে ২০২৫

অজানা নির্মাণশৈলীতে দাঁড়িয়ে আছে ৫০০ বছরের রাজশাহীর কিসমত মারিয়া মসজিদ

ছবি: জনকণ্ঠ

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার মারিয়া গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক কিসমত মারিয়া মসজিদ। লোকমুখে প্রচলিত, মসজিদটি জিন-পরীরা এক রাতে তৈরি করেছিল, তবে কোনো শিলালিপি না থাকায় এর নির্মাণ ইতিহাস সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় না।

স্থানীয়দের মতে, ১৫ শতকে মসজিদটি নির্মিত হয়। তবে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এটি ১৮ শতকে নির্মিত একটি স্থাপনা। মসজিদের গম্বুজ ও নির্মাণশৈলী পুরান ঢাকার করতলব খান মসজিদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। করতলব খান মসজিদটি নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ ১৭০৩ সালে নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়া চুন-সুরকি ও ইটের ব্যবহার দেখে এটিকে মুঘল আমলের স্থাপত্যশৈলী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।

তিনটি গম্বুজ ও চারটি মিনার-আকৃতির স্তম্ভবিশিষ্ট এই মসজিদের দেয়ালে অসাধারণ শৈল্পিক কারুকাজ এখনো দৃশ্যমান। মসজিদে মুসলিম ঐতিহ্য অনুসারে টেরাকোটা কারুকাজ রয়েছে, যার মাঝে গাছ, ফুল ও লতার চিত্র স্থান পেয়েছে। অবশিষ্ট কারুকাজ থেকে বোঝা যায়, মসজিদটি একসময় কতটা সৌন্দর্যমণ্ডিত ছিল।

মসজিদের তিনটি প্রবেশদ্বার আছে, যার প্রতিটির উপরে একটি করে গম্বুজ। সামনের দিকে একটি ছোট উঁচু বারান্দা, যা নিম্ন প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত এবং একটি তিন ধাপবিশিষ্ট সিঁড়ি দ্বারা ভূমির সঙ্গে সংযুক্ত।

মসজিদের দক্ষিণে অবস্থিত একটি দ্বিতল চৌচালা স্থাপনা, যা ‘বিবির ঘর’ নামে পরিচিত। ধারণা করা হয়, মসজিদ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কোনো নারীর ইবাদত ও সাধনার উদ্দেশ্যে ঘরটি তৈরি করা হয়েছিল।

মসজিদের অবস্থান নির্জন আমবাগান ও ফসলি মাঠে হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে একাধিক লোককথা ও মিথ প্রচলিত রয়েছে—যেমন, জিনেরা মসজিদটি তৈরি করেছে, কিংবা পরিত্যক্ত অবস্থায় জিনেরা সাপের বেশে মসজিদে অবস্থান করত।

এ বিষয়ে রাজশাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “কিসমত মারিয়া মসজিদ দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল। পরে স্থানীয় মুসল্লিদের উদ্যোগে আজান ও নামায চালু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটি সংস্কার করে রক্ষণাবেক্ষণ করছে। এখন এখানে নিয়মিত নামায আদায় করা হয়।”

বিস্ময়করভাবে, দেশের অধিকাংশ প্রাচীন মসজিদের পাশে পুকুর বা দিঘি থাকলেও, এই মসজিদের নিকট বড় কোনো জলাধার নেই।

রাজশাহী সদর থেকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক ধরে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে শিবপুর বাজার হয়ে মসজিদে যাওয়া যায়। তবে শেষ চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, প্রশাসন আন্তরিক হলে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে কেন্দ্র করে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।

শহীদ

×