
ছবিঃ সংগৃহীত
এক সন্ধ্যায়, পাঁচ বছর বয়সী মেয়েটি চোখ মেলে তাকিয়ে ছিল টিভির পর্দায়। রঙিন আলো ঝলমল করছে, চরিত্রগুলো চেঁচাচ্ছে, নাচছে—সবকিছুই যেন দ্রুত, চটজলদি। হঠাৎ সে ঘুরে মাকে জিজ্ঞেস করল, “মা, তুমি ছোটবেলায় কী দেখতে?”
মা কিছুক্ষণ থেমে থেকে মৃদু হাসলেন, “আমরা টিভি খুব একটা দেখতাম না। গল্প পড়তাম। বইয়ের পাতায় ছিল গাছ, ট্রেন আর পাহাড়ি মানুষের কথা।” ছোট্ট মেয়েটি যেন কল্পনা করতে চেষ্টা করল, এমন এক পৃথিবী যেখানে রিমোট কন্ট্রোলের প্রয়োজন নেই।
সেই রাতেই, মা টিভি না চালিয়ে হাতে তুলে নিলেন রস্কিন বন্ডের লেখা “দ্য চেরি ট্রি”। বললেন, “এটা আমার প্রিয় গল্প। তোমাকে পড়ে শোনাই।” মেয়েটি প্রিয় খেলনাটি জড়িয়ে বিছানায় মায়ের পাশে গিয়ে বসে।
গল্পটা ছিল এক ছেলের, তার বাগান আর এক চেরি গাছের বীজ থেকে ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠার কাহিনি। কোনো ভিলেন নেই, উত্তেজনাময় ক্লাইম্যাক্স নেই—শুধু ধীর, কোমল এক গল্প। মা ভেবেছিলেন মেয়েটি হয়তো বিরক্ত হবে, কিন্তু সে চুপচাপ শুনে গেল। মাঝে মাঝে মায়ের হাত ধরে রাখল।
গল্প শেষে সে জিজ্ঞেস করল, “আমরাও কি একটা গাছ লাগাতে পারি?”
এই হল রস্কিন বন্ডের গল্পের জাদু। তারা গতি কমিয়ে দেয়, মনকে প্রশান্ত করে, প্রশ্ন তোলে আর এক ধরনের নীরব আবেগ জাগিয়ে তোলে। দ্রুতগামী এই জীবনে, যেখানে শৈশবও যেন দৌড়ে চলছে, সেখানেই তাঁর গল্পগুলো আমাদের থামিয়ে দেয়।
কেন আপনার শিশুর বইয়ের তাকে থাকা উচিত রস্কিন বন্ডের বই?
রস্কিন বন্ডের লেখা শিশুদের জন্য উপযোগী। তার ভাষা সহজ, কিন্তু হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তিনি শিশুর দৃষ্টিভঙ্গিতে গল্প বলেন—স্নেহময়, সরল, অথচ গভীর।
পিতামাতার জন্যও তার লেখা উপকারী। কারণ এগুলো পড়তে সহজ, সময় কম লাগে, কিন্তু যে আবেগ তৈরি হয়, তা অনেকদিন থাকে।
কেন রস্কিন বন্ডের গল্পগুলো শিশুদের জন্য এত উপযুক্ত?
🔹 সহজ ভাষা, গভীর অনুভব
গল্পগুলো ছোট, ভাষা সহজ, কিন্তু বার্তাটি দীর্ঘস্থায়ী। শেষ পাতা পড়ে রাখার পরও ভাবনারা রয়ে যায়।
🔹 ছোট মুহূর্তে বড় অনুভূতি
কখনো কিছু হারানো, কারো জন্য অপেক্ষা, বা নতুন বন্ধুত্ব—এসব অনুভূতি শিশুদের মনে থাকে, কিন্তু তারা হয়তো প্রকাশ করতে পারে না। বন্ডের গল্পে সেগুলো ভাষা পায়।
🔹 প্রকৃতির সান্নিধ্য
তার গল্পে গাছ কথা বলে, পাহাড় স্মৃতি ধরে রাখে, আকাশ রং বদলায়। এসব শিশুকে প্রকৃতির দিকে তাকাতে শেখায়।
🔹 গতি কমানোর সুযোগ
যেখানে সমাজ শিশুদের সব সময় দৌড়ে চলতে শেখায়, বন্ডের বইগুলো সেই তাড়াহুড়োর মাঝে বিশ্রাম এনে দেয়। শিশুর মন আর চোখ—দুটোই একটু থেমে যায়।
🔹 একসাথে সময় কাটানোর মাধ্যম
গল্পগুলো পড়াতে আলাদা পরিকল্পনা লাগে না। শুধু একটা বই হাতে নিয়ে শিশুর পাশে বসুন। গল্প নিজেই সংযোগ তৈরি করে, প্রশ্ন তোলে, আলোচনা গড়ে তোলে।
তিনি এমন সব সাধারণ বিষয় নিয়ে লেখেন, যেগুলো শিশুদের জীবনে বড় মনে হয়: কিছু হারানো, কাউকে মিস করা, বা নতুন বন্ধুত্ব—এসব অনুভূতি, যা শিশুরা অনুভব করে, কিন্তু সবসময় বলতে পারে না।
রস্কিন বন্ডের গল্প শুধু গল্পই নয়—এটা একটা অনুভব, একটা সংযোগ। একজন শিশুর হৃদয়ে প্রকৃতির, ভালবাসার, আর মনোযোগের বীজ বপনের সুযোগ। একবিংশ শতাব্দীর ব্যস্ত জীবনে এমন গল্পগুলো যেন সোনার খনি।
তাই আজই তুলে দিন একটা রস্কিন বন্ডের বই আপনার সন্তানের হাতে—আর হয়তো, তার ছোট্ট মুখে আপনি শুনবেন, “আমরাও একটা গাছ লাগাই, মা?”
সূত্রঃ https://thebetterindia.com/434050/ruskin-bond-books-recommendations-for-children/
ইমরান