ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রোমানিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ, কে এগিয়ে!

প্রকাশিত: ১৫:৩৬, ১৯ মে ২০২৫

রোমানিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ, কে এগিয়ে!

ছবি: সংগৃহীত

রোমানিয়ায় বহুল প্রত্যাশিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পুনরায় ভোটগ্রহণ শেষে রবিবার (১৮ মে) সন্ধ্যায় ভোটকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়েছে। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কট্টর-ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী নেতা জর্জ সিমিওন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থী কেন্দ্রবাদী প্রার্থী ও বুখারেস্টের বর্তমান মেয়র নিকুসর দান।

এই নির্বাচন রোমানিয়ার ভৌগোলিক ও কূটনৈতিক দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে নেটো সদস্য দেশ হিসেবে ইউরোপ বা রাশিয়া ঘনিষ্ঠতার প্রশ্নে।

রোমানিয়ার নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় রাত ৯টায় ভোটগ্রহণ শেষ হলে দেখা যায়, প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ মানুষ - যা মোট ভোটারের ৬৪% - ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৪০ হাজারের বেশি প্রবাসী রোমানিয়ানও ভোট দিয়েছেন, যাদের জন্য শুক্রবার থেকেই বিশেষ ভোটকেন্দ্র চালু করা হয়।

ভোট শেষে বক্তব্যে নিকুসর দান বলেন, “নির্বাচন কেবল রাজনীতিবিদদের নয়, এটি একটি সম্প্রদায়ের বিষয়। আজ এক সম্প্রদায় জয়লাভ করেছে যারা রোমানিয়ায় প্রকৃত পরিবর্তন চায়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা যেন সব সময় মনে রাখি, কঠিন সময়েও রোমানিয়ান সমাজের শক্তি অপরিসীম।”

প্রথম রাউন্ডে (৪ মে) ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫৩%, সেখানে পুনর্নির্বাচনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪%, যা ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

উল্লেখ্য, গত বছর অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী নির্বাচন বাতিল হয়ে যাওয়ার ফলে রোমানিয়া এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে পড়ে। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হিসেবে প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে ছিলেন ক্যালিন জর্জেস্কু, যিনি পরবর্তীতে নির্বাচনী অনিয়ম এবং রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন থেকে বাতিল হন - যদিও মস্কো সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।

ভোটগ্রহণ শেষে রোমানিয়ার বিশাল কমিউনিস্ট যুগের পার্লামেন্ট ভবনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সিমিওন বলেন, “এটি রোমানিয়ান জনগণের বিজয়।”

তিনি দাবি করেন, রাশিয়ার প্রভাব খাটানোর প্রচেষ্টা এবং টেলিগ্রামসহ সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া খবরের প্রচার ছিল এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ।

এই নির্বাচনের ফল রোমানিয়ার পরবর্তী রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে দেশটির নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি ও নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের দিক নির্ধারণ করবে।

সিমিওনের সমর্থকরা তাকে একজন সংস্কারবাদী হিসেবে দেখেন, যিনি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিষ্ঠা করতে চান। তবে সমালোচকরা বলছেন, তিনি রাশিয়াপন্থী এবং রোমানিয়ার নেটো ও ইইউ অংশীদারিত্বকে দুর্বল করতে পারেন।

সিমিওন নিজে অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, রাশিয়া রোমানিয়ার প্রধান হুমকি এবং তিনি চান রোমানিয়া ব্রাসেলসের সঙ্গে “সমান অংশীদারিত্বে” কাজ করুক।

প্রথম রাউন্ডে প্রবাসী ভোটারদের মধ্যে সিমিওন বিশাল ব্যবধানে (৬১%) এগিয়ে ছিলেন। দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের আহ্বান প্রবাসীদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

একইসঙ্গে, সিমিওন অভিযোগ করেছিলেন যে, প্রতিবেশী দেশ মলদোভায় নির্বাচনী জালিয়াতি হয়েছে - যদিও তা মলদোভা ও রোমানিয়ার কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রত্যাখ্যান করেছে।

নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন এবং তাকে নতুন প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন করতে হবে, যেহেতু মার্সেল চিওলাকু পদত্যাগ করেছেন তার দলের প্রার্থী রান-অফে যেতে ব্যর্থ হওয়ায়।

রোমানিয়ার এই নির্বাচন শুধু একটি ভোট নয়, বরং একটি জাতির ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের সন্ধিক্ষণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ফলাফল ঘোষণার কথা রয়েছে।

মিরাজ খান

×