
ছবি: সংগৃহীত।
২০২৫ সালের মার্চে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সফরকালে তার করা কিছু মন্তব্য ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে অস্থিরতা তৈরি করেছে। বিশেষ করে ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চল—যাকে সাধারণত ‘সেভেন সিস্টারস’ বলা হয়—তা নিয়ে তার মন্তব্যকে অনেকেই দেখছেন এক ধরনের ভূ-রাজনৈতিক বারুদে আগুন লাগানোর শামিল।
চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর ড. ইউনূস বলেন, “ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল স্থলবেষ্টিত একটি এলাকা। একমাত্র কার্যকর সমুদ্রপথ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রবেশদ্বার হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকাই মুখ্য।”
এই বক্তব্যকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা দেখছেন বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো কূটনৈতিক অবস্থান হিসেবে। ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়ে যখন ইউনূস চট্টগ্রাম বন্দরে দাঁড়িয়ে বলেন, “এই বন্দর ব্যবহার করে নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সরাসরি লাভবান হতে পারে।” তিনি যোগ করেন, “সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য।”
বাংলাদেশের এমন অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা ও অবকাঠামো বাজেটে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে সম্ভাব্য ভূ-রাজনৈতিক জেদ সামলাতে ২২,০০০ কোটি রুপি ব্যয়ে শিলং-শিলচর চার লেনের হাই স্পিড মহাসড়ক করিডোর নির্মাণ শুরু করেছে ভারত। এই মহাসড়ক বাস্তবায়ন করছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (NHIDCL)।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত মাত্র একটি সরু স্থলপথ দিয়ে, যেটি ‘শিলিগুড়ি করিডোর’ বা 'চিকেন নেক' নামে পরিচিত। এই করিডোরই ভারতের কৌশলগত দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ যদি রাজনৈতিক বা কৌশলগত কারণে এই করিডোর বন্ধ করে দেয়, তাহলে ভারত কার্যত তার সেভেন সিস্টারস অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
এই কৌশলগত চাপ সামলাতে ভারত বেছে নিয়েছে মিয়ানমার রুট। কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অর্থায়ন করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কলকাতা বন্দর থেকে মিয়ানমারের সিত্তে বন্দরে জাহাজ চলাচল হবে, সেখান থেকে নদীপথে পালেতোয়া এবং এরপর জরিনপুই পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করে তা ভারতের আসাম, মণিপুর, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
সামরিক ও লজিস্টিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের সাথে উত্তেজনার পরিণতিতে ভারতের এই নতুন মহাসড়ক ও বিকল্প করিডোর নির্মাণ একটি "কৌশলগত প্যানিক রেসপন্স"। যদিও মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা সংকট ভারতের এই বিকল্প পথকেও অনিশ্চিত করে তুলেছে।
নুসরাত