ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দেশের ক্রীড়া ভবিষ্যৎ বদলাবে বিএনপি:ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে বিস্তৃত পরিকল্পনা তুলে ধরলেন তারেক রহমান

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ১৯ মে ২০২৫; আপডেট: ১১:৩৯, ১৯ মে ২০২৫

দেশের ক্রীড়া ভবিষ্যৎ বদলাবে বিএনপি:ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে বিস্তৃত পরিকল্পনা তুলে ধরলেন তারেক রহমান

দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে বিস্তৃত পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রবিবার (১৮ মে) রাতে লন্ডনে আয়োজিত ‘আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট’-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা খেলোয়াড়দের সমস্ত দায়-দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে। এসময় তিনি প্রাথমিক শিক্ষা ও ক্রীড়ানীতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির ওপরও গুরুত্ব দেন।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ‘আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট’-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে তিনি দেশের ক্রীড়া পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তৃত ধারণা তুলে ধরেন।

তারেক রহমান বলেন, “আমরা যদি স্কুল থেকে ট্যালেন্ট করি, যারা স্পোর্টসম্যান কেউ ফুটবলে ভালো, কেউ টেনিসে ভালো, কেউ ক্রিকেটে ভালো, কেউ ভলিবলে ভালো, কেউ বাস্কেটবলে ভালো,এভাবে আমরা স্কুলগুলো থেকে বের করে নিয়ে আসবো। আমিনুল বলল যে ভাইয়া, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে চারটা বিকেএসপি আছে। আমরা সবগুলো বিভাগে একটা করে বিকেএসপি করতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “তা আমি বললাম, সবগুলো বিভাগে যদি বিকেএসপি করতে পারি, আমাদের অনেক রিসোর্স লাগবে। এই মুহূর্তে আমাদের এত রিসোর্স নেই। যে চারটা আছে, আমরা যদি সুযোগ পাই, এই চারটাকে আমাদের ফাংশনাল করতে হবে। চারটার মাধ্যমেই আমরা ট্যালেন্ট হান্ট করে নিয়ে আসতে পারি, তৈরি করে নিয়ে তখন আমরা দেশে মানুষকে বলতে পারবো, আমরা যদি প্রেজেন্ট করতে পারি ভালো ভালো বিভিন্ন স্পোর্টসের খেলোয়াড়, তখন জাতি সামনে উপস্থাপন করতে পারবো যে, আমাদের আরও বিকেএসপি দরকার। সেটি আমরা বুঝাতে পারবো। এখন এর মধ্যেই আমাদেরকে কাজ করতে হবে।”

শিক্ষা কাঠামো ও ক্রীড়ার সংযোগ নিয়ে তারেক রহমান বলেন, “আপনারা নিশ্চয়ই এর মধ্যে বিভিন্ন বক্তব্য শুনেছেন। আমরা বাংলাদেশের শিক্ষাটাকে, বিশেষ করে প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষাকে একটু ভিন্নভাবে সাজিয়ে দিতে চাই। সেটি কি? ছেলেমেয়েরা শুধু পড়ালেখা করবে না, খেলতেও তো হবে। আপনি যখন ফিজিক্যালি নড়াচড়া করবেন, খুব স্বাভাবিকভাবে আপনার বডিতে রক্ত চলাচল বাড়বে এবং রক্ত চলাচল যত বাড়বে, স্বাভাবিকভাবে আপনার ব্রেনে অক্সিজেন ফ্রেশ হবে। আপনার চিন্তাশক্তি তত ভালো হবে। অক্সিজেন যত বেশি মাত্রায় যাবে, তত চিন্তার সুযোগ পাবেন। সেজন্য খুব স্বাভাবিকভাবে যে ছেলেটা খেলাধুলা করবে, তাকে যদি পড়ালেখার ভালো সুযোগ করে দেওয়া যায়, তাহলেও পড়ালেখাটাও ভালো হবে। কাজেই পড়ালেখা ভালো করতে হলে অবশ্যই খেলাধুলা করতে হবে।”

তিনি লন্ডনের উদাহরণ টেনে বলেন, “যেমন, লন্ডনের বিভিন্ন জায়গায় যাই, তখন একটা জিনিস দেখলে মাঝেমাঝে কষ্টও হয়। আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, প্রতি এরিয়াতে সুন্দর সুন্দর মাঠ,সবুজ মাঠ! দেখলেই মনে হয় মাঠের মধ্যে দৌড়ানো শুরু করি। অনেক মাঠ আছে, যার পাশে সুন্দর করে বাস্কেটবল, বলিবল কিংবা বিভিন্ন স্পোর্টসের ব্যবস্থা করা আছে।”

তারেক রহমান বলেন, “দেখলে মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয়, খারাপও লাগে যে, আচ্ছা ভাই, আমরা কেন পারবো না? আমার খুব ইচ্ছা আছে, ইনশাআল্লাহ আল্লাহর রহমতে সুযোগ পেলে, ঢাকা শহরে আমাদের ১০০টি ওয়ার্ড। আমরা কি একটা জিনিসও করতে পারি না? আমরা যদি একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করি, অন্তত প্রতি দুটো ওয়ার্ডের মাঝখানে তিন থেকে চার বিঘা একটা খোলা সবুজ জায়গা বের করি, সেখানে বাচ্চারা খেলবে, মুরুব্বিরা থাকবেন, বয়স্করা সেখানে হাটাহাটি করবেন। চারপাশে গাছ লাগানো থাকবে, বুক ভরে শ্বাস নেওয়া যাবে। ঠিক এরকম একটা চিন্তা আছে।”

তিনি বলেন, “আমরা অনেক সময় শুনি আত্মীয়স্বজন বলে, এই বাচ্চারা সারাক্ষণ শুধু ফোন নিয়ে খেলছে। আরে ভাই, বাচ্চাদের তো মাঠ করে দিতে হবে! তাহলেই ওরা খেলবে। মাঠের ব্যবসা নাই বলেই তো ওরা আজকে সারাক্ষণ ঘরে বসে আছে, সারাক্ষণ ইন্টারনেটের মধ্যে আছে। তো এরকম একটা চিন্তাধারা আছে।”

স্কুল সিলেবাস পুনর্গঠনের ভাবনা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “আমাদের স্কুলের কম বেশি বিভিন্ন রকম সাবজেক্ট আছে— বাংলা, ইংরেজি, অংক, বিজ্ঞান। প্রত্যেকটা সাবজেক্ট হয়তো ১০০ নম্বরের। এখন আমরা ১০০ নম্বর থেকে কিছু কিছু নম্বর বের করে আনতে চাই। অবশ্যই স্পেশালিস্ট আছেন, তাদের সঙ্গে আমরা আলাপ করবো। আমাদের প্রাথমিক চিন্তা হচ্ছে, এই মার্কিং থেকে কিছু নম্বর বের করে এনে আমরা নতুন কিছু ইন্ট্রোডিউস করবো।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “যেমন, বাংলা ফার্স্ট পেপার ১০০ নম্বর। আমরা যদি ৮০ নম্বরে নিয়ে আসি, ২০ নম্বর বের করে আনি, তাহলে এই ২০ নম্বর কোথায় দিবো? ধরুন, বাচ্চাদের সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ, থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ শেখাবো। কম্পালসারি করে দিবো। হয়তো পাঁচটি স্পোর্টস থেকে বেছে নিতে বলবো। যার যেটা পছন্দ, সে সেই খেলায় থাকবে। কিন্তু স্পোর্টস করতেই হবে। ছেলেমেয়ে সবার জন্যই স্পোর্টস বাধ্যতামূলক করবো। কারণ ঘরে বসিয়ে রাখতে চাই না আমি।”

তারেক রহমান বলেন, “আমরা স্কুল লেভেল থেকেই ট্যালেন্ট হান্ট করে নিয়ে আসতে চাই। এটা আমাদের লং টার্ম পরিকল্পনার অংশ। ধরুন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করেছি। দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। এই নির্বাচনের জন্য গত ১৫ বছর আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। বহু নেতাকর্মী, সহকর্মীকে হারিয়েছি। গুম, খুন, হত্যা হয়েছে, হাজারো মানুষ পঙ্গু হয়েছে। শুধু বিএনপি নয়, সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেন হয়েছে? রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।”

তিনি আরও বলেন, “এই রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা এমন একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যে সরকার মানুষের কল্যাণের কাজ করবে। ইনশাআল্লাহ, আগামী দিনে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে, ধরুন ডিসেম্বরের মধ্যে যদি নির্বাচন হয় এবং সেই নির্বাচনে আমরা সুযোগ পাই, তাহলে আমাদের হাতে নেক্সট অলিম্পিক পর্যন্ত চার বছর সময় থাকবে। আমরা কয়েকটি স্পোর্টস বেছে নেব এবং আগামী ছয় বছর ধরে প্রস্তুতি চালাবো। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোকে লক্ষ্য করবো। স্কুল লেভেল থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে ট্যালেন্ট বের করে আনবো। তাদের কাজ হবে একটাই- খেলা, খেলা এবং খেলা।”


তারেক রহমান তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে জানান, “আমরা যাদেরকে বাছাই করে আনবো, যারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে, তাদের সকল দায়-দায়িত্ব রাষ্ট্র নিবে। এটি মোটামুটি ক্রীড়া নিয়ে, খেলা নিয়ে, ক্রীড়া জগৎ নিয়ে আমাদের দল বিএনপির ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনা।”

 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/hjzxjxes

আফরোজা

×