ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ববিতে মেয়াদ শেষের আগে তিনজন ভিসির বিদায়

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১৯ মে ২০২৫

ববিতে মেয়াদ শেষের আগে তিনজন ভিসির বিদায়

বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগ হয় চার বছর মেয়াদের জন্য। সে হিসেবে ১৫ বছরে পদার্পণ করা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) এ পর্যন্ত চারজন ভিসির দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু ববিতে গত ১৩ মে রাতে ষষ্ঠ ভিসি নিযুক্ত হয়েছেন। 

আগের পাঁচজনের তিনজনকেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বিদায় নিতে হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সবার অগোচরে তাদের ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, তিনজন ভিসির অনাকাঙ্ক্ষিত বিদায়ের মূল কারণ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি ও তাদের বিশেষ সুযোগ প্রদান করা। সেক্ষেত্রে বঞ্চিতরা সুযোগ খুঁজতে থাকেন। তুচ্ছ ঘটনায় তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন উসকে দিয়ে থাকেন। 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মেয়াদ শেষ শেষের আগেই বিদায় নেয়া ভিসিরা হলেন-আট মাস দায়িত্ব পালনকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। ১০ মাস দায়িত্বে থাকা ঢাবির অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভুঁইয়া এবং মেয়াদের শেষের দিকে থাকা দ্বিতীয় ভিসি ড. এসএম ইমামুল হক।

সূত্রমতে, আন্দোলনকারীদের সাথে সমঝোতা করতে ইমামুল হক দুঃখ প্রকাশ এবং বদরুজ্জামান ভুঁইয়া ক্ষমা প্রার্থনা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। সর্বশেষ গত ১৩ মে রাতে অব্যাহতি পাওয়া ভিসি শুচিতা শরমিন বিদায়ের আগেরদিন আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে, ভিসি এসএম ইমামুল হকের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছিলো তাতে তৎকালীন বরিশালের রাজনীতিতে প্রভাবশালী বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নের পরিবারের ইন্ধন ছিল বলে গুঞ্জন রয়েছে। 

আরেক উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভুঁইয়া দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফ্যাসিস্টের দোসর উল্লেখ করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনের দুইদিনের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনের সাথে প্রো-ভিসি ড. গোলাম রব্বানী ও কোষাধ্যক্ষ মামুন অর রশিদের বিরোধ আন্দোলনের সূত্রপাতের অন্যতম কারণ। যেকারণে ভিসির সাথে তাদেরকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 

পাশাপাশি চার বছরের পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা দুইজন হলেন-প্রথম ভিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হারুন-অর রশীদ এবং চতুর্থ ভিসি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরুটা হয় ২০১৯ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম ইমামুল হকের দায়িত্বকালীন সময়ে। তিনি সবচেয়ে বেশি আন্দোলনের মুখে পরেছিলেন। 

ওইসময় শিক্ষকদের একাংশ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। দুইদফায় তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে হয়। একবার ১৫ দিন ও আরেকবার টানা ৪৪ দিনের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় অচল করে দেওয়া হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্বেচ্ছায় ছুটির আবেদন করেন। একপর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে বাধ্যতামূলক তিনমাসের ছুটিতে পাঠায়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দীন বলেন, যখন ভিসি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন, সবাইকে দিয়ে নয়; কোনো একটা গোষ্ঠীকে নিয়ে চলতে থাকেন তখনই সমস্যা হয়।

অপরদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম গত ১৫ মে ববিতে যোগদান করে বলেছেন, ববিকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে এবং মান, মর্যাদা ও র‌্যাংকিং আরও এগিয়ে নিতে আমি আমার সাধ্যমতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। 

তিনি আরও বলেন, আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা সুষ্ঠুভাবে পালনে সচেষ্ট থাকব। আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করব।

সজিব

×