ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত ও জ্বালানির সব বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ

প্রকাশিত: ১০:১১, ২৫ এপ্রিল ২০২০

  বিদ্যুত ও জ্বালানির সব বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ

রশিদ মামুন ॥ কোভিড-১৯’র প্রভাবে সারাদেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে বিদ্যুত এবং জ্বালানি খাতের সব বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজই বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু ছোট প্রকল্পের কাজ চললেও ঢিমেতালে বাস্তবায়ন হচ্ছে কাজ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করার জন্য যেমন দেশীয় শ্রমিক সঙ্কটে রয়েছে ঠিক একইভাবে বিদেশ থেকেও তাদের কর্মী আনতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে সব উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজই পিছিয়ে যাবে। বিদ্যুত এবং জ্বালানি বিভাগের তরফ থেকে বলা হচ্ছে সব উন্নয়ন প্রকল্প পুনর্বিন্যাস করা হবে। নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যাওয়ার সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির একটি সম্পর্ক রয়েছে। যাতে প্রকল্প ব্যয় ঠিক রেখে উন্নয়ন কাজ করা যায় সে দিকে নজর দেয়া হচ্ছে। এজন্য এই সময়ে যে ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণ করে সবই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি এক টেলিকনফারেন্সে বিদ্যুত এবং জ্বালানি খাতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে প্রকল্পগুলো পুনর্বিন্যাস বা রি-সিডিউল করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। সূত্র মতে, সরকারের বড় উন্নয়ন প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজই হচ্ছে বিদ্যুত এবং জ্বালানি খাতে। তিনটি মেগা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি বিদ্যুত পায়রা-১৩২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে এসেছে। বিদ্যুত কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট আগামী জুনে উৎপাদনে আসার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউনে সেই প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে। জানা গেছে, মাতারবাড়ি-১২০০ মেগাওয়াট এবং রামপাল-১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণ কাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রামপাল বিদ্যুত প্রকল্পের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা ছিল আগামী ডিসেম্বরে। কিন্তু এখন তা পিছিয়ে যাবে। একটি বিদ্যুত প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জানান, কাজ করার জন্য যে লোকবল থাকার কথা তা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এই পরিস্থিতিতে কাজ ব্যাহত হবে এটিই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, এখন ভাল সময়ের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। কাজ করার পর কোন কোন ঠিকাদার বিল পাচ্ছেন না। ফলে তারাও কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অফিস বন্ধ থাকায় আমরা বিলও পরিশোধ করতে পারছি না। বিদ্যুতের নির্মাণ প্রকল্পের পাশাপাশি সঞ্চালন এবং বিতরণ কোম্পানির বেশ কিছু বড় প্রকল্পের কাজও ঝুলে যাচ্ছে। এর মধ্যে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) গোপালগঞ্জে সাবস্টেশন নির্মাণ করে সেখান থেকে ঢাকায় বিদ্যুত আনার সব থেকে বড় প্রকল্পের কাজও এই পরিস্থিতিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চীনা ঋণ সহায়তায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল তাও থমকে কাছে। পিজিসিবির একজন কর্মকর্তা জানান, চাইলেও এই মুহূর্তে আমরা পুনর্গতিতে কাজ করতে পারব না। আর সেটা করাটাও একটি ভুল হবে। তিনি বলেন, এরপরও পরিস্থিতি ভাল হলে কিভাবে আরও বেশি কাজ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করতে পারি সেই চিন্তা করা হচ্ছে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধের ওপর। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পিজিসিবি এবং ডিপিডিসির দুটি বড় ঋণ চুক্তি ছিল। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে এসে চীনের পরিস্থিতি খারাপ হওয়াতে এই ঋণের অর্থছাড় বিলম্বিত হবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। এখন চীনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আমাদের পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। সব মিলিয়ে এসব প্রকল্প নিয়ে শঙ্কা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সরকার বলছে, বিদ্যুতের ভবিষ্যত প্রকল্পগুলোতে সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। এটি না হলে বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদন না করেই বসে থাকবে। বলা হচ্ছে এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে যেসব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল তার সবগুলোয় এখন করোনা ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করেছে। বিদ্যুতের মতো জ্বালানি বিভাগের প্রকল্পগুলোতেও করোনার ছায়া পড়েছে। দেশের তেল পরিবহনে যুগান্তকারী উন্নয়নে ঢাকা চট্টগ্রাম পাইপ লাইন নির্মাণের পাশাপাশি, ভারত-বাংলাদেশ পাইপ লাইন এবং সাগর থেকে তেল আনার জন্য সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছিল। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ভারত-বাংলাদেশ পাইপ লাইনের নির্মাণ কাজ শুরু না হলেও মাঠ পর্যায়ের কাজ হচ্ছিল যা এখনও শেষ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত আরও একটি পাইপ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। যার সবই কাজে অনেকটা থমকে গেছে। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন জরুরী প্রয়োজন মেটাতে যেসব কাজ প্রয়োজন তাই করা হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে খুব একটা নজর দেয়ার কোন সময় নেই কারও। তিনি বলেন, পরিস্থিতি ভাল না হলে এসব নিয়ে কাজ করাও কঠিন বলে মনে করেন তিনি।
×