ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুলে যেতে পারছে না কিশোর শাহজালাল ॥ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২৪ আগস্ট ২০১৯

 স্কুলে যেতে পারছে না কিশোর শাহজালাল ॥ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৩ আগস্ট ॥ জন্ম থেকে বইয়ে চলা অস্বাভাবিক মাংসপিন্ড নিয়ে এখন আর চলতে পারছে না কিশোর শাহজালাল। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। স্কুলে যেতে পারছে না। কোন কাজ করতে পারে না। খেলতে পারে না। ঠিকমতো ঘুমুতে পারছে না। রাতে কান্না করে। এক কথায় স্বাভাবিক জীবনযাপন অসহনীয় হয়ে গেছে। দরিদ্র, অসহায় বাবা শাহজাহান হাওলাদার একটি ছোট্ট খাবার হোটেল দিয়েই ছয়জনের সংসারের বোঝা ঠেলছেন। একবেলা খাবার জোটে তো, আরেকবেলা উপোস। মা তোপেয়া বেগম নিজের অজান্তেই সন্তান শাহজালালের দুশ্চিন্তায় চোখের পানি ঝরায় অনবরত। কাটে বিনিদ্র রাত। বিনা চিকিৎসায় অসহায় ছেলেকে নিয়ে এ পরিবারে এখন অন্যদেরও রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের চরচাপলী বাজারের দোকানটির পেছনেই বসবাস ছোট্ট শাহজালালের। তিন ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে শাহজাহানের পরিবার। শাহজাহান জানায়, জন্মের পর পরই ডান কানের ওপর মাথা থেকে একপি- মাংস ঝুলে আছে। তখন কোন ব্যথা ছিল না। আঁচিল মনে হয়েছিল। কিন্তু ক্রমশ এটি নিচের দিকে বেড়ে ঝুলতে থাকে। ছোট্ট বয়সে একবার ডাক্তার দেখিয়েছেন। তখন বলা হয়েছে, বড় হলে অপারেশন করাতে হবে। এখন এটির ভার বইতে শাহজালালের অনেক কষ্ট হয়। প্রায় দেড় কেজি ওজন এ মাংসপি-ের। প্রচ- ব্যথা করে। তারপরও এ ছেলেকে স্কুলে পাঠাচ্ছে। কিন্তু সব সময় যেতে পারে না। এখন ক্লাস টুতে পড়ছে। বর্তমানে অস্বাভাবিক প্রকৃতির এ টিউমারটি অপসারণে দ্রুত প্রয়োজন যথাযথ চিকিৎসার। বর্তমানে বিনা চিকিৎসায় কাতরাচ্ছে ছোট্ট শাহজালাল। কিন্তু বাবা-মায়ের পক্ষে আদৌ শিশু শাহজালালের দ্রুত চিকিৎসা করাতে পারবে কিনা তা পড়েছে চরম অনিশ্চয়তায়। প্রয়োজন চিকিৎসা সহায়তা। মাদারীপুরে ছাত্রের জীবন বিপন্ন নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজ (৮) নামের এক স্কুলছাত্রের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সে তিন বছর ধরে স্কুলে যেতে না পারায় তার লেখা-পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। ডিএমডি নামক এক রোগে রাজের দু’পা শুকিয়ে বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। হাঁটাচলা তো দূরের কথা, সে এখন দু’পায়ে ভর করে দাঁড়াতেও পারছে না। শিশু রাজ মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়নের ক্রোকচর গ্রামের রিয়াজুল ইসলামের একমাত্র সন্তান। জানা গেছে, রাজ জন্মের পাঁচ বছর পরে হঠাৎ করে স্বাভাবিক হাঁটাচলায় প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। প্রথমে তার পরিবার ঢাকায় নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে রাজের চিকিৎসা শুরু করেন। দীর্ঘদিন সুচিকিৎসা করেও তার কোন উন্নতি না হওয়ায় রাজকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের খ্রীস্টান মেডিক্যাল কলেজে। দেখানো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে ডিএমডি রোগ। তামিলনাড়ু রাজ্যের খ্রীস্টান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে ছয় মাস পর পর ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরও রাজের দু’পা শুকিয়ে বাঁকা হয়ে যেতে থাকে। এখন হাঁটাচলা তো দূরের কথা, সে দু’পায়ে ভর করে দাঁড়াতেও পারছে না। ভারতীয় ডাক্তাররা বলেছেন, এ রোগের কারণে রাজের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে যেতে পারে। চীনের বেজিং পুহুয়া ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালে নিয়ে চিকিৎসা করালে রাজ সুস্থ হয়ে উঠবে বলে তামিলনাড়ুর খ্রীস্টান মেডিক্যাল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন। তবে সেখানে চিকিৎসা করানো অত্যন্ত ব্যয়বহুল, প্রায় ২৫লাখ টাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ও ভারতে বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করে চিকিৎসা করানোর পর রাজের পরিবার এখন নিঃস্ব। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। বিনা চিকিৎসায় রাজের জীবন এখন বিপন্ন প্রায়। রাজের পিতা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমি চীনের বেজিং পুহুয়া ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, সেখানে স্টেম সেল এ্যাক্টিভেশন এবং স্টেম সেল ট্র্যান্সপ্লান্টেশনের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করানো হয়। আমি ওই হসপিটালে রাজের চিকিৎসার জন্য আবেদনও করেছি।
×