শেখ আব্দুল আওয়াল, গফরগাঁও থেকে ॥ গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেহাল দশা একজন ডাক্তার একদিন ডিউটি করে স্বাক্ষর করে ৭ দিনের। এতে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার শত শত রোগী চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যেতে হয় বিভিন্ন ক্লিনিকে। কর্মরত থাকার কথা এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা চতুর্থ শ্রেণীর এক মহিলা কর্মচারীর কাছে গিয়ে ’কোন চিকিৎসক আছেন কিনা’ জানতে চাইলে তিনি আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বলেন, ‘আপনি ক্যা! রোগী কই?’ বিনয়ের সঙ্গে মহিলা কর্মচারীর নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি ‘অ বুঝছি! আপনি ডিজি অফিসতে আইচেন- আমি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। ডাক্তার সায়েবদের ডাইকা দিতেছি’ বলেই ক্ষিপ্রগতিতে চলে যান। সরেজমিনে, সোমবার ও মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ২টা পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুমোদিত ৩৪ জন ডাক্তারের মধ্যে প্রেষণে আছেন ৪ জন, গত ২ বৎসর যাবৎ কর্তৃপক্ষের অনুমোতি ছাড়াই অনুপস্থিত ডাঃ আরিফুর রহমান, গত ৪ মাস ধরে অনুপস্থিত ডাঃ আফরোজা ইসলাম। ১৪ জন ডাক্তারের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ৩ ডাক্তারকে পাওয়া যায়। দুপুর ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোন ডাক্তারকে পাওয়া যায়নি। ডাক্তারদের জন্য নির্ধারিত কামরাগুলো অধিকাংশই তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। কয়েকটি কামরা খোলা থাকলেও কামরাগুলোতে কর্মরত ডাক্তার পাওয়া যায়নি। দেখা যায় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত রোগী হাসপাতালে ডাক্তার না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ ফ্লোরা আফরোজ, ডাঃ তপন কুমার দাশ, ডাঃ আমেন খাতুন মিতা, ডাঃ নুসরাত জাহান, ডাঃ নিয়ামুল হাছান, অর্থোপেডিক্সের কনসালটেন্ট ডাঃ মিজানুর রহমানসহ ১১ জন ডাক্তারই কর্মস্থলে অবস্থান না করে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করে ট্রেনে কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করেন। হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট লোকজন জানায়, ঢাকায় অবস্থানকারী ডাক্তার সপ্তাহে ছয়দিনের পরিবর্তে দুদিন হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন। অনেকের বিরুদ্ধে সপ্তাহে ১ দিন কর্মস্থলে আসারও অভিযোগ রয়েছে। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ডাঃ তপন কুমার দাশ জানান, তিনি শনিবার দিন আসবেন। অর্থোপেডিক্স কনসালটেন্ট ডাঃ মিজানুর রহমান সপ্তাহে দুদিন রবিবার ও বুধবার এই হাসপাতালে রোগী দেখে থাকেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিদিন অসংখ্য রোগীর ভিড় থাকলেও ডাক্তারদের দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালে ৪ মাস যাবৎ অনুপস্থিত ডাঃ আফরোজা ইসলামের কাছে মুঠোফোনে জানতে চইলে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানিয়েই আমি অনুপস্থিত এ ব্যাপারে আপনারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের (টিএইচএ) ম্যাডামের কাছে জানেন। ডাঃ আরিফুর রহমান ২ বৎসর যাবৎ অনুপস্থিতির বিষয়টি জানতে চেয়ে ফোন করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। (মোবাইল নং-০১৭২২৩২৮৮৮৩)। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলম আরা বেগম বলেন, ডাক্তাররা দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির কারণে এই হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তারকে শোকজ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ইমার্জেন্সিতে সপ্তাহে একজন ডাক্তার আসলেও ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করে ৬ দিন আসেন না। তিনি আরও বলেন, ভাই আমি অল্পকিছু দিন চাকরিতে আছি আমাকে বিপদে ফেলবেন না।
বাগেরহাটে দুই চিকিৎসক শুরু থেকেই অনুপস্থিত
স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট থেকে জানান, সদর হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন দুই চিকিৎসক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার চিঠি ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ করলেও কোন সাড়া পায়নি ওই চিকিৎসকদের কাছ থেকে। এ অবস্থায় চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে বিভাগীয় কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অভিযুক্তরা হলেন- বাগেরহাট সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডাঃ কামরুন সাত্তার এবং জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেস্থেসিয়া) ডাঃ মনোয়ার হোসেন তালুকদার। ডাঃ কামরুন সাত্তার ২০১৮ সালের ৯ জুন এবং ডাঃ মনোয়ার হোসেন তালুকদার ২০১৭ সালের ৫ নবেম্বর বাগেরহাট সদর হাসপাতালে যোগদান করেন। যোগদান করার পরের দিন থেকে এ দুই চিকিৎসক অনুপস্থিত রয়েছেন।
শীর্ষ সংবাদ: