ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দশ দেশেই কর্মী নিয়োগ নিয়ে জটিলতা

কখনও খুলছে কখনও বন্ধ ॥ অস্থির জনশক্তি বাজার

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৫ আগস্ট ২০১৭

কখনও খুলছে কখনও বন্ধ ॥ অস্থির জনশক্তি বাজার

ফিরোজ মান্না ॥ বাংলাদেশের শ্রমবাজার মূলত ১১ দেশে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ওমান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, লেবানন, জর্দান ও লিবিয়া। এখন লিবিয়ায় বৈধ পথে কোন কর্মী যাচ্ছে না। এ দেশটি বিশ্বের কাছে চিহ্নিত হয়েছে ইউরোপে মানব পাচারের রুট হিসেবে। মূলত ১০টি দেশেই কর্মী রফতানি হচ্ছে। কিন্তু এ ১০টি দেশেই কর্মী নিয়োগ নিয়ে নানা জটিলতা লেগেই আছে। একবার কোন দেশ বাজার খুলে দিচ্ছে আবার বন্ধ করছে। আবার কোন দেশ অবৈধ কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বৈধ কর্মীদেরও দেশ থেকে বের করে দিচ্ছে। জনশক্তির বাজার বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্থির অবস্থায় চলছে। বাংলাদেশের শ্রমবাজার ১০টি দেশে হলেও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দাবি করছে, বিশ্বের ১৬২টি দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার রয়েছে। এর বাইরে আরও নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৮০টি দেশে শ্রমবাজার খোঁজা হয়েছে। কিন্তু ওই সব দেশ থেকে কর্মী নিয়োগের একটি চাহিদাপত্র আসেনি। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিদেশে আরও বেশি কর্মী পাঠানোর জন্য নতুন বাজার খোঁজা হচ্ছে। নতুন বাজারের মধ্যে রয়েছেÑ উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, পশ্চিম ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, জাপান, ব্রাজিল, ইতালি ও সুইডেন। এ দেশগুলোতে দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য চেষ্টা চলছে। বাজারগুলো তৈরি হলে দেশের বহু শিক্ষিত ও দক্ষ কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। তবে নতুন বাজারের পাশাপাশি পুরনো বাজারগুলোর কয়েকটিতে বেশকিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। সমস্যাগুলো দূর করার জন্যও কাজ করা হচ্ছে। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজারে বর্তমানে বৈধ পথে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় বন্ধ রয়েছে। এ বাজারটি চালু করার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। আশা করা যাচ্ছে অল্প কিছুদিনের মধ্যে বাজারটি খুলে যাবে। বাজারটি খুলে গেলে দেশ থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত রয়েছেন। অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি সংস্থার মতে, বাংলাদেশের মূল শ্রমবাজার মূলত ১১টি। বাকি দেশগুলোতে মানুষ নিজেদের চেষ্টা-তদবিরে গেছেন। ১৬২টি দেশে বাংলাদেশের নাগরিকরা রয়েছেন এটা ঠিক। তারা ওই সব দেশ থেকে রেমিটেন্সও পাঠাচ্ছেন। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে তারা যাননি। নানা উপায়ে তারা বিভিন্ন দেশে গেছেন। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ওমান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, লেবানন, জর্দান ও লিবিয়ায় কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। সরকার দাবি করছে ১৬২টি দেশে বাংলাদেশের শ্রমের বাজার রয়েছে, যে বাজারগুলোতে প্রতিনিয়ত কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। এই ১৬২টি দেশের মধ্যে এমনও দেশ রয়েছে, যে দেশে গত দুই বছরে একজন কর্মীও নিয়োগ হয়নি। দেশের যে ১১টি মূল শ্রমবাজার রয়েছে, ওই বাজারগুলো ঠিক থাকলে প্রতি বছর দেশ থেকে ১০ থেকে ১২ লাখ কর্মী নিয়োগ পেতেন। পুরনো বাজারগুলোই তো ঠিক থাকছে না। মাঝেমধ্যেই পুরনো বাজারগুলোতেও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার পুনরায় চালুর মাধ্যমে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে। তবে কোন নতুন দেশ বাংলাদেশের বাজার হিসেবে দেখা দেয়নি। জাপান একটি চুক্তি করে তারা নিজেরা প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য কিছু কর্মী নিয়োগ দেবে। ওই কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ে দেশে ফিরে অন্য কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার কাজ করবে। এর বাইরে আসলে এ সেক্টরে তেমন কোন উন্নতি হয়নি। বিদেশে কর্মী পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয় নানামুখী উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। দক্ষ কর্মী তৈরির জন্য সারাদেশে ৩৮টি ট্রেনিং সেন্টারে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে দক্ষ কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষ কর্মী তৈরি এবং প্রেরণে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জাপানে নির্মাণ খাতে বাংলাদেশী কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তারা চায় বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ করতে। জাপানের বাজারটি চালু হলে কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। তাছাড়া এ বাজারে কর্মীদের বেতন-ভাতা অনেক ভাল। জাপানে কর্মী পাঠানোর এমন সুযোগ জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে বড় একটি বিষয়। দক্ষ কর্মী নিয়োগের আগেই জাপান ৬শ’ ডাক্তার নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। আইএম নিজেরাই ডাক্তার ও কর্মীদের সাক্ষাতকার নিয়ে নিয়োগের জন্য বাছাই করবে। এখানে মন্ত্রণালয় তাদের সহযোগিতা দেবে। এদিকে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছর সাড়ে সাত লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর টার্গেট নেয়া হয়েছে। বছরের শুরুর তিন মাসে প্রায় আড়াই লাখ কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছেন। মন্ত্রণালয় আশা করছে, বছর শেষে টার্গেটের চেয়ে অনেক বেশি কর্মী বিদেশে চাকরি পাবেন।
×