ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজার বেতার

তিন লাখ খরচ করে ১৮ লাখ টাকার বিল

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ২৪ জুন ২০১৭

তিন লাখ খরচ করে ১৮ লাখ টাকার বিল

এইচ এম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজার বেতার কেন্দ্রে তিন লাখ টাকার কম টাকা খরচ করে শিল্পীদের সই জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ১৮ লাখ টাকার বিল-ভাউচার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ বেতার, কক্সবাজার কেন্দ্রের বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠান ‘আলোকিত বাংলাদেশ’। একইভাবে রামু, চকরিয়া ও মহেশখালীতেও অনুষ্ঠিত হয়েছে একই অনুষ্ঠান। জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চাকে আরও বেগবান করার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-কে সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার লক্ষেই ‘আলোকিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সরকারের এ রকম মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নেই পুকুর চুরির মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন কক্সবাজার বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমান। গুটিকয়েক শিল্পীর অংশগ্রহণে দায়সারাভাবে অনুষ্ঠান শেষ করা হলেও শিল্পীদের নামে বেনামে ভুয়া কন্ট্রাক্ট বানিয়ে প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টাকার ভুয়া বিল তৈরি করেন তিনি। বর্তমানে এসব বিল অনুমোদনের জন্য জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠানো হয়েছে। যার সিংহভাগই ভুয়া। এ ঘটনায় শিল্পীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শিল্পীদের অভিযোগ, বাস্তবে লাখ লাখ টাকার ভুয়া বিল করা হলেও অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের গ্রেড অনুযায়ী এ গ্রেডের শিল্পীকে ১ হাজার ১শ’ টাকা, বি গ্রেডে নয় শ’ টাকা ও সি-৬২৫ টাকা সম্মানি দেয়া হচ্ছে। অথচ একই অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বেতারে দেয়া হচ্ছে ৪ হাজার, সাড়ে ৩ হাজার ও ৩ হাজার টাকা করে। জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে অনুমোদনের জন্য পাঠানো বিলের তালিকায় দেখা গেছে, কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে অনুষ্ঠিত হয় আলোকিত বাংলাদেশ শীর্ষক বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠানে ৬৪ জন একক শিল্পীর ছাড়াও শুধু ‘মলকা বানুর বিয়ের হঁলা’ ‘পরিবানুর বিয়ের হঁলা’ ‘রাখাইন প্রজাপতি নৃত্যে’ এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ শীর্ষক নাটিকার জন্য মোট ১ লাখ ২০ হাজার ৫শ’ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। একইভাবে রামু, চকরিয়া ও মহেশখালীসহ চার উপজেলার জন্য ৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হলেও শুধু রামুতে মলকাবানুর বিয়ের হঁলা ছাড়া আর কোনটির পরিবেশনা অনুষ্ঠানে হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিল্পীরা। এছাড়াও চারটি অনুষ্ঠানে একক শিল্পীর তালিকায় (প্রতিটিতে ৬৪ জন করে) শিল্পীর সম্মানি বাবদ ৭ লাখ ৫২ হাজার ৪৫০ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও বাস্তবে ১৫ জনের বেশি একক শিল্পী কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি। বাকিদের সই নকল করে ভুয়া কন্ট্রাক্ট দেখানো হয়েছে। এমনকি তালিকায় এমন নামও আছে বেতারে যে নামের কোন অস্থিত্বই নেই। এছাড়াও পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার, মঞ্চ, সাউন্ডসহ সবমিলে চারটি বহিরাঙ্গনের ব্যয় দেখানো হয় প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টাকা। কক্সবাজার বেতারের নাট্য প্রযোজক স্বপন ভট্টাচার্য বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, নাটক পরিবেশন তো দূরের কথা, বহিরাঙ্গনের কোন অনুষ্ঠানেই আমি এবং আমার স্ত্রীর (বণানী চক্রবর্তী) অংশগ্রহণ ছিল না। শুনে অবাক হলাম রামু, চকরিয়া ও মহেশখালীতে তিনটি অনুষ্ঠানেই আমাদের অংশগ্রহণ দেখিয়ে আমাদের নামে মোটা অঙ্কের বিল বানানো হয়েছে। নিশ্চয় আমাদের স্বাক্ষর নকল করে এ কাজটি করা হয়েছে। বেতারের মতো প্রতিষ্ঠানে এরকম জগণ্য জালিয়াতি মোটেও কাম্য নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেতারের এক সিনিয়র শিল্পী জানান, প্রায় দেড় বছর আগে বর্তমান আঞ্চলিক পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমান কক্সবাজার বেতারে যোগদানের পর থেকে নানা অজুহাতে রেকর্ডিং বন্ধ করে দেন। জাতীয় দিবসের হাতেগোনা কয়েকটি বিশেষ অনুষ্ঠান রেকডিং করেই চালিয়ে দিয়েছেন প্রায় দেড় বছর। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি ও প্রতিরোধের মার্চ মাসে প্রায় প্রতিদিনই বিশেষ অনুষ্ঠান থাকার কথা থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটি অনুষ্ঠান রেকডিং করে ৯০ দিন চালিয়েছেন। বেশিরভাগ পুনঃপ্রচার অনুষ্ঠান দিয়ে চলছে কক্সবাজার বেতার। তাঁর একান্ত সহকারী এক সময়ের বিএনপির ক্যাডার মোসলেহ উদ্দিনের সহযোগিতায় প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা ভুয়া বিল করে তার সম্মানজনক একটি অংশ বেতারের সদর দফতরের উর্ধতন এক কর্মকর্তার কাছে পাঠান। যে কারণে নানা অনিয়ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছে আরডি হাবিব। নিজে সুবিধা আদায় এবং অবস্থা পাকাপোক্ত করার জন্য ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে বাজেট লোপাটের জন্য আরডিকে উৎসাহিত করেন ওই মোসলেহ উদ্দিন। সব অপকর্মে নাড়ের গুরু হিসাবে থাকলেও দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মোসলেহ উদ্দিন একই কর্মস্থলে বহাল তবিয়তে আছেন। অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে কক্সবাজার বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, সব অনুষ্ঠানের বাজেট এক নয়। কক্সবাজারের যে খরচ- সে খরচে চকরিয়া-মহেশখালীতে অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুকোমল বড়ুয়া বলেন, বেতারের অনেক বিল এসেছে। বিলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে আসলে আমাদের করার কিছু থাকে না।
×