ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

$ ২শ’ কোটি ছাড়াল

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৩ জুন ২০১৬

$ ২শ’ কোটি ছাড়াল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ ২শ’ কোটি ডলারের ‘ঘর’ অতিক্রম করেছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ২শ’ ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে। এ বিনিয়োগ ২০১৪ সালের চেয়ে ৪৪ শতাংশ বেশি। ওই বছর ১শ’ ৫৫ কোটি ১০ লাখ ডলার এফডিআই এসেছিল। আঙ্কটাডের ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট-২০১৬’ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বুধবার মতিঝিলে বিনিয়োগ বোর্ডে এ রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠান হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যে এফডিআই এসেছে তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রথম অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তাদের এ বিনিয়োগের পরিমাণ চার হাজার ৪শ’ ২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ভারতে এ এফডিআই বেড়েছে ২৭ শতাংশ। আর এফডিআইয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইরান। প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি এফডিআই এসেছে গ্যাস, বিদ্যুত ও পেট্রোলিয়াম খাতে। জ্বালানির এসব খাতে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে ৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে টেক্সটাইল বা তৈরি পোশাক শিল্প খাত (আরএমজি)। এখানে এসেছে ৪৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এছাড়া টেলিকমিউনিকেশন খাতে ২৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ব্যাংকিং খাতে ৩১ কোটি ডলার, ফুড প্রোডাক্টে ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার, কৃষি ও মৎস্য খাতে দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং অন্যান্য খাতে ৫০ কোটি ৩০ লাখ ডলারের বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ কমবে। ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়া, কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ মুনাফা কমে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সন্ত্রাসবাদের কারণে নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে যাওয়ার কারণে বিনিয়োগের পরিমাণ কমবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে এফডিআই বেড়েছে ৩৮ শতাংশ বা ১ দশমিক ৭৬ ট্রিলিয়ন ডলার। উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে এফডিআইয়ের পরিমাণ ৭৬৫ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে, যা ২০১৪ সালের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ৩৮০ বিলিয়ন ডলার এফডিআই সংগ্রহ করে প্রথম স্থানে রয়েছে। হংকং ১৭৫ বিলিয়ন ও চীন ১৩৬ বিলিয়ন করে তার পরের অবস্থানে রয়েছে। তবে আগামী বছর এফডিআই কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে এফডিআই ১০ থেকে ১৫ ভাগ কমে যেতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতিতে ভঙ্গুরতা, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, কার্যকরী ট্যাক্স পলিসিসহ বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে এফডিআই কমতে পারে।’ অবশ্য নানা ধরনের নীতি সহায়তার কারণে ২০১৭ ও ’১৮ সালে এফডিআই ভাল অবস্থানে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থনীতির অধ্যাপক ইসমাইল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, বিদু্যুত ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘এফডিআই দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়ানোর মাধ্যমে আমরা সাহস সঞ্চার করতে পেরেছি, যা আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি যত বাড়বে, তত বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বেড়ে যাবে। আমাদের অর্থনীতি এখনও অনেক তরুণ, যার প্রবৃদ্ধি হওয়ার অনেক জায়গা রয়েছে।’ উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রের ঘাটতি কোন সমস্যা নয় মন্তব্য করে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রের ঘাটতি কোন সমস্যা নয়। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুদক্ষ নেতৃত্বের, যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে। দেশকে উন্নত করতে এ ধরনের নেতৃত্বের প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৭০ সালের দিকে আলজিরিয়া, মিসর ও ইরান উন্নত দেশ হওয়ার পথে ছিল। কিন্তু দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদের দেশেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এসএ সামাদ বলেন, গত বছর কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল না। বিনিয়োগের ভাল পরিবেশ ছিল। এটি বিনিয়োগ বাড়ার একটা কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খুব বেশি ঝুঁকি নেই। আর ঝুঁকি না থাকলে এফডিআই বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।’
×