ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ঘণ্টার পর ঘণ্টা কানে ব্লুটুথ হেডফোন গুঁজে রাখলে ক্যানসারের ঝুঁকি? সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশিত: ১৯:১০, ৭ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১৯:১০, ৭ আগস্ট ২০২৫

ঘণ্টার পর ঘণ্টা কানে ব্লুটুথ হেডফোন গুঁজে রাখলে ক্যানসারের ঝুঁকি? সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞরা

ছবি: সংগৃহীত

ঘন্টার পর ঘণ্টা কানে গুঁজে রাখা ব্লুটুথ হেডফোন বা ওয়্যারলেস ইয়ারফোন কি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে? বিশেষত, এই ডিভাইসগুলো নিয়মিত ব্যবহারে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে কি না—এই প্রশ্ন এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্লুটুথ বা ওয়্যারলেস হেডফোন যেমন Apple AirPods, Bose, Beats বা Bone-conduction হেডফোন (যেমন: Shokz) থেকে নির্গত রেডিওফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশন (RFR) মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে—যদিও এখনো পর্যন্ত এই আশঙ্কার পক্ষে নিশ্চিত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলেনি।

কোথা থেকে এল এই আশঙ্কা?

২০১৫ সালে বেশ কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, মোবাইল ফোন, Wi-Fi, মোবাইল টাওয়ার বা ওয়্যারলেস বেবি মনিটরের মতো ডিভাইস থেকে নির্গত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন (EMR) দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শে থাকলে মস্তিষ্কের টিউমার, বন্ধ্যাত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

এই তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের ২০০ জনেরও বেশি বিজ্ঞানী WHO ও জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানান EMR-এর ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য।

২০১৯ সালে AirPods-এর জনপ্রিয়তা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পর এই বিতর্ক নতুন করে আলোচনায় আসে। গবেষকরা তখন বিশেষভাবে নজর দেন RFR-এর দিকে, যা ওয়্যারলেস যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়।

রেডিয়েশনের ধরন ও বিপদের মাত্রা

রেডিয়েশন প্রধানত দুই ধরনের:

আয়নাইজিং রেডিয়েশন: (যেমন X-ray, গামা রশ্মি) যা DNA-এর গঠন নষ্ট করে ক্যানসারের কারণ হতে পারে।

নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন: (যেমন রেডিও তরঙ্গ, ব্লুটুথ) যা তুলনামূলকভাবে অনেক দুর্বল এবং DNA-তে সরাসরি ক্ষতি করতে পারে না।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিবেগুনি (UV) রশ্মির মতো কিছু নন-আয়নাইজিং তরঙ্গ ত্বকের ক্যানসার ঘটাতে সক্ষম—যার ভিত্তিতে অনেকে RFR-এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়েও চিন্তিত, বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে।

বিজ্ঞান কী বলছে?

ভারতের National Cancer Institute (NCI)-এর মতে, ব্লুটুথ ডিভাইস থেকে নির্গত RFR-এর মাত্রা সেলফোনের তুলনায় ১০ থেকে ৪০০ গুণ কম এবং তা DNA-তে ক্ষতির সম্ভাবনা রাখে না।

২০১৯ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, ব্লুটুথ রেডিয়েশন X-ray-এর তুলনায় লক্ষ লক্ষ গুণ দুর্বল।

এছাড়াও, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, ব্লুটুথ বা মোবাইল ব্যবহারের কারণে ব্রেন টিউমারের পরিমাণে উল্লেখযোগ্য কোনো বৃদ্ধি হয়নি।

তবুও কেন সতর্কতা জরুরি?

যদিও মার্কিন CDC, FDA এবং FCC-এর মতে ব্লুটুথ ডিভাইসের কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি নেই, তবুও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনস্থ International Agency for Research on Cancer (IARC) এখনো RFR-কে ‘সম্ভাব্য ক্যানসার সৃষ্টিকারী’ হিসাবে চিহ্নিত রেখেছে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

  • একটানা দীর্ঘ সময় ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহার না করাই ভালো
  • শিশুদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি
  • ঘুমের সময় বা নীরব পরিবেশে প্রয়োজন না হলে হেডফোন এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

রাকিব

×