ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

বিশ্বের কোন ১০ দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশিদিন বাঁচে

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ৭ আগস্ট ২০২৫

বিশ্বের কোন ১০ দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশিদিন বাঁচে

ছবি: সংগৃহীত

সুস্থ, দীর্ঘ ও পরিপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এবং ইতিবাচক মানসিকতা অত্যন্ত জরুরি। তবে এই উপাদানগুলো সব দেশের নাগরিকদের জন্য সমানভাবে সহজলভ্য নয়। বিশ্বের কিছু দেশ আছে, যেখানে মানুষ শুধু বেশি দিনই বাঁচে না, বরং বার্ধক্যেও সক্রিয় ও সুস্থভাবে জীবনযাপন করে। গড় আয়ুর দিক থেকে এগিয়ে থাকা এই দেশগুলোর অভ্যাস, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনদর্শন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, বিশ্বের এমন ১০টি দেশের কথা, যেখানে মানুষের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি— এবং সেই অভ্যাসগুলো, যা তাদের দীর্ঘদিন প্রাণবন্ত রাখে।

১. মোনাকো (গড় আয়ু: ৮৭ বছর)

ফরাসি রিভেরার উপকূলে অবস্থিত ধনাঢ্য ক্ষুদ্র রাষ্ট্র মোনাকো পৃথিবীর সর্বোচ্চ গড় আয়ুর দেশ। বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা, টাটকা সামুদ্রিক খাবার, জলপাই তেলে সমৃদ্ধ ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য এবং চাপমুক্ত, অবসরপ্রবণ জীবনযাপন এখানকার দীর্ঘায়ুর মূল চাবিকাঠি। এখানকার মানুষ বার্ধক্যেও সুস্থভাবে কাজ করতে আগ্রহী।

২. হংকং (গড় আয়ু: ৮৫ বছর)

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, চমৎকার চিকিৎসা ব্যবস্থা ও শারীরিক সক্রিয়তা—এই তিনের সমন্বয়ে হংকংয়ের মানুষ পৃথিবীর সর্বোচ্চ আয়ুর তালিকায় রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ক্যান্টনিজ রান্না, ভাপানো মাছ, শাকসবজি ও ভেষজ স্যুপ তাদের দীর্ঘজীবনের সহায়ক। হাঁটার অভ্যাস এখানকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

৩. সান মারিনো (গড় আয়ু: ৮৪ বছর)

ইতালির মাঝে অবস্থিত ছোট্ট রাষ্ট্র সান মারিনো বিশ্বের প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্র। পরিষ্কার বাতাস, কম দূষণ, ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য এবং দৃঢ় সামাজিক সম্পর্ক তাদের আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে।

৪. জাপান (গড় আয়ু: ৮৪ বছর)

বিশ্বে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি জাপানে। মাছ, শৈবাল, টফু ও গাজানো খাবারে সমৃদ্ধ খাদ্যতালিকা এবং সক্রিয় জীবনযাপন তাদের দীর্ঘায়ুর পেছনে মুখ্য ভূমিকা রাখে। জাপানি সমাজে গভীর জীবনবোধ ও সামাজিক সম্প্রীতিও অন্যতম কারণ।

৫. দক্ষিণ কোরিয়া (গড় আয়ু: ৮৩ বছর)

গত কয়েক দশকে নাটকীয়ভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় গড় আয়ু বেড়েছে। কিমচিসহ গাজানো খাবার, চমৎকার স্বাস্থ্যসেবা, এবং সৌন্দর্য ও সুস্থতা সচেতনতা তাদের দীর্ঘজীবনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার সামাজিকভাবে সংযুক্ত ব্যস্ত জীবনধারা মানুষকে সক্রিয় রাখে।

৬. স্পেন (গড় আয়ু: ৮৩ বছর)

স্পেনের ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য—জলপাই তেল, তাজা ফলমূল ও সামুদ্রিক খাবারে সমৃদ্ধ। সক্রিয় জীবনধারা, হাঁটার অভ্যাস, দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন এবং চাপমুক্ত জীবনদর্শন স্পেনের মানুষকে দীর্ঘজীবী করে তুলেছে।

৭. সুইজারল্যান্ড (গড় আয়ু: ৮৩ বছর)

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা এবং সুস্থ বহিরাঙ্গণ জীবনধারা সুইসদের দীর্ঘায়ুর পেছনে ভূমিকা রাখে। তাদের খাদ্যতালিকায় গোটা শস্য, দুগ্ধজাত পণ্য ও তাজা উপাদান গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কাজ ও অবসরের ভারসাম্য জীবনের গুণগত মান উন্নত করে।

৮. অস্ট্রেলিয়া (গড় আয়ু: ৮৩ বছর)

উচ্চমানের চিকিৎসা, বহিরাঙ্গণ সংস্কৃতি এবং সক্রিয় জীবনধারার জন্য অস্ট্রেলিয়ানরা সুপরিচিত। সকালের সাঁতার, উপকূলীয় হাঁটা কিংবা পারিবারিক বারবিকিউ—সবই তাদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সংযোগ বজায় রাখতে সহায়তা করে। মানসিক চাপও এখানে তুলনামূলকভাবে কম।

৯. ইতালি (গড় আয়ু: ৮৩ বছর)

‘ডলস ভিটা’ অর্থাৎ মধুর জীবনের দর্শন ইতালিয়ানদের দীর্ঘজীবনের পেছনে একটি শক্তিশালী উপাদান। ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য, পারিবারিক বন্ধন, ধীর গতির জীবনযাপন এবং নিয়মিত হাঁটা ইতালিয়ানদের আয়ু বাড়াতে সাহায্য করেছে।

১০. সিঙ্গাপুর (গড় আয়ু: ৮৩ বছর)

বিশ্বের সেরা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার একটি রয়েছে সিঙ্গাপুরে। শহরের কাঠামো হাঁটাচলাকে উৎসাহিত করে। স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা এবং আধুনিক চিকিৎসা সেবা এখানকার নাগরিকদের দীর্ঘ জীবন নিশ্চিত করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দেশগুলোর অভ্যাস, জীবনদর্শন এবং পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে দীর্ঘ, সুস্থ ও পরিপূর্ণ জীবন পাওয়া অসম্ভব নয়। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে শুধু চিকিৎসা নয়, চাই সচেতন জীবনযাপনও।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=Dsx3CYNqhDI

রাকিব

×