ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৭ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

গাজা দখলের পথে ইসরায়েল: ৭০% এলাকায় বসবাস নিষিদ্ধ, খাদ্য সংকটে লাখো মানুষ

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ৭ মে ২০২৫; আপডেট: ০০:৩৯, ৭ মে ২০২৫

গাজা দখলের পথে ইসরায়েল: ৭০% এলাকায় বসবাস নিষিদ্ধ, খাদ্য সংকটে লাখো মানুষ

ছবিঃ সংগৃহীত

গাজার ৭০% এলাকা এখন ‘নো-গো’ জোনে পরিণত হয়েছে, যেখানে ইসরায়েল তার সামরিক অভিযান বাড়িয়ে ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক দপ্তর (OCHA) জানিয়েছে যে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের স্থানচ্যুত করার জন্য বিশাল এলাকা জুড়ে জোরপূর্বক বাধ্যতামূলক স্থানান্তরের আদেশ জারি করেছে। এই ব্যবস্থা শুরু হয় মার্চ মাসে, যখন ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় আবার আক্রমণ শুরু করে।

দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা ‘নো-গো’ জোন ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে ইসরায়েলিরা স্থানীয় বাসিন্দাদের স্থানান্তর করতে বলেছে। একইভাবে, উত্তর গাজার গাজা শহরের প্রায় সব অঞ্চলও সীমাবদ্ধ হয়েছে, এবং শুধুমাত্র শহরের উত্তর-পশ্চিম অংশে কিছু স্থান বাদ রাখা হয়েছে। শুজাইয়া এলাকা এবং ইসরায়েলি সীমান্তের আশেপাশের এলাকাও পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতি ইসরায়েলের আক্রমণাত্মক পরিকল্পনাকে নির্দেশ করে, যেখানে তারা শুধু সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে না, বরং তাদের উদ্দেশ্য গাজা অঞ্চলের জনসংখ্যার গঠন এবং রাজনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তন করা। এদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন যে, তাদের লক্ষ্য শুধু হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা নয়, বরং গাজা থেকে মানুষের সংখ্যা কমানো এবং তাদের জীবিকা রুদ্ধ করা।

ইসরায়েল যখন ‘নজিরবিহীন’ সামরিক আক্রমণের পরিকল্পনা করছে, তখন গাজার সাধারণ মানুষ গভীর অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্কে জীবন কাটাচ্ছে। তাদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি হয়েছে যে, তারা তাদের বাড়িঘর ফিরে পাবেন না, এবং এই পরিস্থিতি মানবিক দুর্দশার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

এই আক্রমণের কারণে গাজার বাজারে খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, গাজার বাজারে কোনো খাদ্য মজুদ নেই এবং খাবারের জন্য কোন সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না। তারা জানিয়েছে যে, ১০ লাখেরও বেশি গৃহহীন মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ এখন সম্পূর্ণরূপে শেষ। বটসেলেম, ইসরায়েলের মানবাধিকার গ্রুপ, ইসরায়েলকে ‘যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ক্ষুধা ব্যবহার’ করার অভিযোগ তুলেছে, যেখানে শিশুদের মধ্যে ক্ষুধার্ত মানুষদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গাজার মানুষের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, কারণ সাহায্যের প্রবাহ কঠোরভাবে সীমিত করা হয়েছে।

এই সবকিছুর মধ্যেও গাজার সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের প্রতিবাদী মনোভাব দেখা যাচ্ছে। সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অনেক ফিলিস্তিনি তাদের প্রতিরোধের অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন এবং বলছেন, তারা যেকোনো মূল্যে গাজা ছাড়বেন না। এই সংকটের মাঝে, প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের এই চেতনা তাদের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন।

এখন পর্যন্ত, ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং আক্রমণের ফলে গাজায় ৫২,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য গাজার মানবিক সংকট সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

সূত্রঃ আল-জাজিরা

 

আরশি

×