ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

প্রকৃতির অপরূপ সাজ

শারমিন নাহার ঝর্ণা

প্রকাশিত: ১৮:১৯, ১০ জুলাই ২০২৫

প্রকৃতির অপরূপ সাজ

ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। গ্রীস্মের কঠোর অগ্নি তাপে দত্ত প্রকৃতিতে বর্ষা নিয়ে আসে শীতল ও সজীবতা সকল প্রাণ যেন ফিরে পায় স্বস্তির নিশ্বাস। বিভিন্ন ঋতুর আগমনে অতুলনীয় প্রাকৃতিক লীলা বৈচিত্র্য ঘটে। বর্ষা ঋতুর আগমনে প্রকৃতি যেন নব যৌবন ফিরে পায়। বর্ষাকালের অন্যতম সৌন্দর্য হলো কদমফুল। কদমফুল দিয়ে শিশুরা মালা গাঁথে। 
কদম ফুলের সৌরভ বাতাসে বাতাসে ভেসে বেড়ায় দিগন্তে। বৃষ্টি ভেজা কদমফুল যেন সবার মন কাড়ে। বর্ষাকালে হাসনাহেনা, গন্ধরাজ, কদমফুল, কেয়া, জুঁই, চামেলী কলাবতী, কামিনী, জারুল প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। বর্ষাকালে টিনের চালে টাপুরটুপুর শব্দে মনটা উদাস হয়। দূরের সবুজ শ্যামল গ্রামের পুরো মাঠে জলরাশি আকাশে ঘন কালো মেঘ, দূরের আকাশে সাদা বক পাখিরা উড়ে যায় দূর অজানায়। নৌকা নিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ও কৃষকরা আনন্দ করে বর্ষার পানিতে বর্ষার রূপ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।
বর্ষার পানিতে শাপলা পদ্ম ফুল ফুটে থাকে। শাপলা ফুল তুলে ছেলেমেয়েরা খুব আনন্দ করে। সাদা সাদা শাপলা যেন রূপের মুগ্ধতা ছড়ায়। বর্ষার আকাশ খুব ব্যস্ত সারাদিন আকাশে মেঘের ঘনঘটা মেঘের আড়ালে সূর্য লুকোচুরি খেলে। বর্ষাকালে বাংলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে তাকালে দেখা যায় সবুজ আর সবুজ। গাছপালা ও প্রকৃতিতে একটা সজীবতা ভাব বিরাজ করে। আকাশ দেখলে মনে হয় আকাশের বুক ফেটে যেন এখনই বৃষ্টি হবে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতার ভাষায় বলেছেন।

‘নীল নবঘনে আশার গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে 
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।

বর্ষাকালে গ্রাম বাংলার দৃশ্য খুবই সুন্দর। চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে। ছোট গ্রামগুলোকে দেখে মনে হয় যেন সমুদ্রের মাঝে দ্বীপ। বর্ষাকালে জোসনা রাতে ছোট-বড় সবাই নৌকায় করে ঘুরে বেড়ায়। জোসনা রাতে নৌকায় ঘুরে বেড়ানো খুব আনন্দের। বর্ষার পানিতে বিলগুলো কানায় কানায় ভরে থাকে।
বর্ষার পানিতে অনেক ধরনের দেশীয় মাছ মনের সুখে খেলা করে সাঁতার কেটে বেড়ায় বর্ষাকাল যেন মাছের জীবনে ঈদের আনন্দ বয়ে আনে। বৃষ্টির পানিতে কৈ মাছেরা খেলা করে বেড়ায়, বর্ষাকালে নদী-নালা-খাল বিল পানিতে ভরপুর থাকে। নতুন পানিতে অনেক মাছের আগমন ঘটে। বর্ষাকালে চারদিকে পানিতে থৈ থৈ করে। এ সময় ছোট ছেলেমেয়েদের খুব সাবধানে রাখতে হয়। বর্ষার পানিতে কৃষকরা মনের সুখে পাটের আঁশ ছাড়িয়ে পাঠখড়ি বের করেন। মেয়েরা ঘরে বসে নকশি কাঁথা সেলাই করে। বৃদ্ধরা বসে ছোটদের কিচ্ছা শোনায় পুঁথি পড়ে গল্প করে আর মুড়ি মুড়কি খায়। অনেক সময় বর্ষাকালে মাঠঘাট জনপদে ডুবে যায়, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। চারদিকে কাদা ও পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। অনেক সময় বর্ষাকালে ভয়ংকর বন্যা দেখা দেয় বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়ায় মানুষ আক্রান্ত হয়। বর্ষাকালে আমাদের সবদিক দিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বর্ষাকাল যেমন আমাদের জন্য অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসে, তেমন ভোগান্তও আছে। তাই আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। তবে অপকারের চেয়ে উপকার অনেক বেশি। কেননা বর্ষা না হলে আমাদের এই দেশ মরুভূমিতে পরিণত হতো।
পরিমিত বর্ষা হলে প্রচুর ফসল উৎপন্ন হয়। বর্ষা ঋতুর কারণে এদেশ সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা সবুজে সবুজে ছাওয়া অপরূপ এক বাংলাদেশ তাই তো বর্ষাঋতুকে ঋতুর রানী বলা হয়।

প্যানেল/মো.

×