ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অসুস্থ সন্তানের শুশ্রূষায়

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:৪৩, ৩১ মার্চ ২০২৩

অসুস্থ সন্তানের শুশ্রূষায়

প্রতিবন্ধী মামুনকে নিয়ে মা ফরিদা ইয়াসমিন

মাতৃত্ব যে কোনো নারীর মহিমান্বিত সম্পদ। দশ মাস দশ দিন জঠরে সযতেœ লালন করে যে মা সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান তেমন ঐশ্বর্য অতুলনীয়। সম্পদই বটে। মায়ের কোল আলো করা সন্তান যখন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে তেমন সময়গুলোও সুখে-আনন্দে ভরপুর হয়ে যায়। কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও সব কিছু অন্ধকারে ঢেকে যাওয়ার উপক্রম। মায়ের অকৃত্রিম বাসনায় জিইয়ে থাকে একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তান।

কিন্তু এর ব্যত্যয় কত যে যন্ত্রণাকাতর অনুভব তেমন ঘটনা বাস্তবে ঘটে যেতেও দেরি হয় না। মা ফরিদা ইয়াসমিন তার অসুস্থ ও বিকলাঙ্গ ছেলেকে নিয়ে গত ৩১ বছর প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য সব সহায় সম্পদ হারানোর বেদনায় যতনা ব্যথিত তার চেয়ে বেশি স্পর্শকাতর অনুভব অস্বাভাবিক সন্তানের জীর্ণশীর্ণ শারীরিক দুরাবস্থায়। সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় মেঘাই গ্রামে এই দম্পতির আবাস। পিতা আবু হানিফ একজন পোশাক শিল্প শ্রমিক।

আর্থিকভাবে অসচ্ছল পারিবারিক দূরবস্থায় প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসায় নিজেদের সর্বস্ব হারিয়ে এখন সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের প্রত্যাশায় দিন কাটাচ্ছেন। শুধু কি তাই? প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেওয়ার কারণে সবসময় শ^শুরবাড়ির লাঞ্ছনা-গঞ্জনাও সহ্য করতে হয়েছে মাকে। সন্তানের বয়স ৩১ বছর হলেও শারীরিক গড়নে সেই শিশুকালের আদল। আরও বুদ্ধি বলতে যেন সবই শূন্য। হতবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকানো ছাড়া অন্য কিছু স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ যেন এক অসহনীয় দুর্ভোগ। 
অসুস্থ ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুনকে দীর্ঘদিন ধরে সিরাজগঞ্জ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা করানোর পরও নারীর ও চিন্তার তেমন কোনো সুফল না  পাওয়াও পরিস্থিতির দুর্বিপাক। সুদীর্ঘ ৩ দশক ধরে বাড়িতেও নিয়মিত চিকিৎসা করাতে থাকেন। কিন্তু তেমন কোনো লাভ  না হলেও সন্তানটি এখনো পর্যন্ত বেঁচে আছে। সেজন্য অসহায় মা সমাজের বিত্তবান মানুষের কাছ থেকে কিছু সাহায্য সহযোগিতাও কামনা করছেন। ইতোমধ্যে যা অনেক হৃদয়বান ও সমাজসেবক ব্যক্তিরা করেও দেখিয়েছেন।

ফরিদা ইয়াসমিনের সহৃদয় আকুতি তার অতি কষ্টে বেঁচে থাকা সন্তানের জন্য সমাজের সচ্ছল ও হৃদয়বান মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় যদি অসুস্থ সন্তানটি বেঁচে থাকার সুযোগ ও সুবিধাটুকু পায় তাহলে মা ফরিদা চিরকৃতজ্ঞতায় বাধিত থাকবেন। এক লড়াকু মা তার দীর্ঘ জীবনের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সংগ্রামী যাত্রায় প্রতিবন্ধী সন্তানকে যেভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন সেটাও যেন এক অনন্য নজির। সহায়-সম্বলহীন ইয়াসমিন সব হারিয়েও সন্তানের সুস্থতা এখন অবধি শূন্যের যেন কোঠায়। তারপরও তার সুদীর্ঘ জীবনযুদ্ধ বিরতিহীনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

এখন সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন দূরঅস্ত শুধু সন্তান কোনোমতে বেঁচে থাক- এমনটাই কামনা দুঃখিনী মায়ের। চিকিৎসার খরচ জোগাতে একেবারে হিমশিম খাওয়ার অবস্থা। মানুষের জীবন কখনো সোজা, সরল পথে নির্বিঘ্নে এগিয়ে চলে না। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনায় চড়াই-উৎরাই পার হয়ে মানুষ তার জীবন তরি এগিয়ে নেয়। ফরিদা ইয়াসমিনও তার অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী সন্তান মামুনকে নিয়ে গত ৩০ বছর নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামী বৈতরণী পার করেও তেমন কোনো সফলতা হাতের নাগালে পাননি। পাওয়া বলতে শুধু সন্তান বেঁচে আছে সেটাই যেন পরম প্রাপ্তি। দুধে ভাতে নয় সন্তান বেঁচে থাক শরীর ও মনের হরেক বাধা বিঘœকে অতিক্রম করে এতটুকু কামনা থাকল মামুনের জন্য।  
অপরাজিতা প্রতিবেদক

×