ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯

monarchmart
monarchmart

লেখক হয়ে ওঠার গল্প

বনানী সিনহা

প্রকাশিত: ০১:৫৬, ৩ মার্চ ২০২৩

লেখক হয়ে ওঠার গল্প

বনানী সিনহা

করোনাকালীন সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা ভাবলে এখনো গা শিউরে ওঠে। সারাক্ষণ আতঙ্ক নিয়ে কাটত দিনগুলো। সেই আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে অনেকেই নিজেকে বিভিন্নভাবে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেছে। আর সবচেয়ে সহজ মাধ্যম ছিল ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ফেসবুকে সবাই সবার অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করেছেন। সেই সুযোগে বিকশিত হয়েছে অনেক সুপ্ত প্রতিভার। বনানী সিনহা, কবিতা লিখেন। সেই মহামারিকালে যখন চারদিক থেকে কেবল মৃত্যুর খবর আসত, মন অস্থির হতো। তখন তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে ¯্রষ্টার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন কবিতার ভাষায়। সেই কবিতাগুলো ধীরে ধীরে সবার হৃদয় ছুঁতে থাকে। পরিচিত মহলে কবি হিসেবে চিহ্নিত হন।
বনানী সিনহা ইডেন মহিলা কলেজে সমাজকল্যাণে স্নাতকোত্তর অধ্যয়রত অবস্থায় ডিভি লটারি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান মে, ২০১১ সালে। পরের বছর ৩ আগস্ট, ২০১২ সালে দেশে এসে ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে আবার চলে যান। বর্তমানে মা, দুই মেয়ে ও স্বামীসহ বসবাস করছেন সেখানেই। ১৯ মার্চ ২০১৮ সাল থেকে তিনি পেশায় একজন সিটি কর্মকর্তা হিসেবে (স্কুল সেফটি এজেন্ট) পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কর্মরত। বরাবর কবিতানুরাগী বনানী চাকরি, সংসার, সন্তান সামলে অবসর সময়টুকু এখন কবিতা লিখেন।

বনানী বলেন, ‘২০২০ সালের বিশ্বে মহামারি করোনা যখন নিউইয়র্কসহ পুরো বিশ্ব মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। লকডাউনে আতঙ্ক-মৃত্যু-অসুস্থতা-কান্না মানুষের জীবনকে দিশাহারা করে তোলে। যখন চারপাশের প্রিয়মুখের কান্না শুনতাম, তখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। কষ্টের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে বিবেক আমাকে একরকম পাগল করে তোলে। আমি দুইটা কবিতা একই সঙ্গে শুরু করি। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে লেখা ‘তোমার জন্য’ ও করোনা নিয়ে লেখা ‘মৃত্যুযুদ্ধ’। দুটো কবিতাই একসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করি।

যেটাতে আমি অভাবনীয় সাড়া ও উৎসাহ পাই। আর তখন বাংলাদেশের একটা পত্রিকায় ও নিউইয়র্কের কয়েকটা পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। ২০২১ সালের বই মেলায় আরডিএম মিডিয়া অ্যান্ড প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয় আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘তোমার জন্য’। এবার একুশে বইমেলা, ২০২৩- এ উচ্ছ্বাস প্রকাশনী হতে প্রকাশ হলো আমার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘সাহিত্যের অমৃত পথে’। আরও একটা যৌথ কাব্যগ্রন্থ বের হয়েছে, ‘শব্দ সোপানে অবারিত রোদ।’
বনানী নিজের ভালোলাগা থেকেই কবিতা লিখেন। আগে কখনো লেখার প্রতি কোনো আকর্ষণ ছিল না। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি কবিতা লিখতে পরিবেশ থেকেও অন্তরের বিশুদ্ধ অনুভূতিটা বেশি প্রয়োজন। যেটাতে আমি লীন হতে পারি। হয়তো সেটা ঈশ্বর প্রদত্ত।’ মায়ের অনুপ্রেরণা বনানীকে বেশি উদ্বুদ্ধ করে। মা নিজেও কবিতা লিখেন আর মেয়ের কবিতা ভীষণ পছন্দ করেন। মেয়ের প্রতিটি কবিতাই তিনি পড়েন। স্বামী পড়ার সুযোগ না পেলেও পাশে থেকে উৎসাহ দেন। বই প্রকাশে তার অবদানই সবচেয়ে বেশি। সন্তানরা যেহেতু আমেরিকায় জন্ম, তাই বাংলা পড়তে পারে না। তবে তারাও বুঝতে পারে মা লেখালেখি করেন। 
আর পরিবারের অন্যরাও তাঁকে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা দেন। বনানী মাঝে মাঝে ইংরেজি কবিতাও লিখেন। ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে আরও ইংরেজি কবিতা লিখবেন। তার বড় কারণ তার প্রজন্ম।
বনানীর মতো এমন সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হোক। নতুনের মাঝে বারেবারে ফিরে আসুক পুরনোর পূর্ণতা।

monarchmart
monarchmart