ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপ ফুটবল গৃহিণীদের ব্যস্ত প্রহর

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ০১:৪২, ৯ ডিসেম্বর ২০২২; আপডেট: ০১:৪৩, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

বিশ্বকাপ ফুটবল গৃহিণীদের ব্যস্ত প্রহর

দুনিয়া জুড়ে চলছে বিশ্বকাপ ফুটবলের উৎসব। নারীরাও এমন হৃদয় মাতানো আনন্দ থেকে কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই

দুনিয়া জুড়ে চলছে বিশ্বকাপ ফুটবলের উৎসব। নারীরাও এমন হৃদয় মাতানো আনন্দ থেকে কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। এক সময়ের শুধু দর্শক নারীরা যুগের আবেদনে খেলার মাঠেও নিজেদের অংশীদারিত্ব প্রমাণ করে যাচ্ছে। সঙ্গত কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারী খেলোয়াড়রা ফুটবল এবং ক্রিকেটে স্থান করে নেওয়াও এক বড় অর্জন। এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলে আরও একটি নতুন চমক মুগ্ধতার বিস্ময়। সেটা যেমন অভাবনীয় একইভাবে এই পর্যন্ত ফুটবলের জগতে ব্যতিক্রমী যোগসাজশও। তিন নারী রেফারি এবার মাঠে তাদের জায়গা করে নেওয়াটাও সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা ও সক্ষমতা।
সম্প্রতি সারা বিশ্ব এক অন্য আলোয় দ্যুতি ছড়াচ্ছে। কাতারে শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবল-২০২২। মাতিয়ে দেওয়ার মতো খেলা তো বটেই। ফুটবল বলে কথা। দেশে দেশে বিভিন্নভাবে অতীত থেকে বর্তমান খেলার ভুবনটা এক আনন্দময় অনন্য শিহরণ। পক্ষ-বিপক্ষ ছাড়াও দলগত সমর্থন ও অসমর্থন সব কিছুকে ছাপিয়ে শেষ অবধি শুধু নির্দিষ্ট খেলাটাই উদ্ভাসিত হয়ে উঠাও এক ঐতিহাসিক বিচিত্রতা।

আমাদের অতীত বিশ্বাসে ছিল খেলা মানেই ছেলেদের। মেয়েরা হা-ডু-ডু, কানামাছি কিংবা কুতকুত ছাড়া অন্যকিছু খেলতে পারবে তেমন ধারণাই এক সময় ছিল না। কিন্তু আধুনিক যুগে সময়ের দাবি যুগের চাহিদায় নারীরা যে মাত্রায় ঘরে থেকে বাইরে পা রেখেছে। সেখানে অনেক কিছুকেই তারা নিজের আয়ত্তে আনতে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাও ছিল স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে প্রমাণ করা। ফলে খেলার মতো অপেক্ষাকৃত কঠিন জগতের দ্বার উন্মোচন করা যেন সময়ের সঙ্গে তাল মেলানো।

তবে ঘরের গৃহিণীরা খেলা দেখতে ভালোবাসে এবং বিদেশের মাটিতে খেলা যখন শুরু হয় সে পর্যায়ে সময় ঘণ্টার হেরফেরও এক বিশিষ্ট মাত্রা। অবশ্য এ কথা সত্য যে, ঘরের কর্ত্রী একেবারে টিভি সেটের সামনে বসে সারাক্ষণই খেলা দেখেন তা কিন্তু নয়। রাত জাগার পর্যায়ে স্বামী-সন্তানের জন্য চা-বিস্কিটের ব্যবস্থাও করে দিতে হয় ফাঁকে-জোকে। সঙ্গত কারণে নিদ্রাহীন দুই চোখ ঘুমে ঢুলু ঢুলু করলেও তাকে কাটিয়ে ওঠে খেলা দেখার মানুষদের সেবাই যেন কর্তব্যের মধ্যে পড়ে যায়। আবার কিছু গৃহিণী তো অবশ্যই দর্শক।

তাদের পড়তে হয় বিব্রতকর অবস্থায় বিজ্ঞাপনের ফাঁকে তো চা-নাস্তা তৈরি করার মতো সময়ও হয় না। দুই একটা শট না দেখেও দায়িত্ব পালন করতে যাওয়াটা বিশেষ নিয়ম। বিদেশে খেলা হচ্ছে- কিন্তু আমাদের অফিস-আদালত; স্কুল-কলেজ তো বন্ধ থাকছে না। প্রসঙ্গটা আনলাম এই কারণে সময়মতো স্বামী সন্তানদের অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে সকালের নাস্তা ও দুপুরের টিফিন যোগাড় করার দায়ভাগও স্ত্রী ও মায়েদের। অর্থাৎ খেলা মানেই দিন-রাত্রির অবসরবিহীন সময় পার করা।

বিরক্তি, আলস্য, ক্লান্তি যেন সর্বাঙ্গজুড়ে পেয়েই বসে। তার ওপর আছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো দলের বাংলাদেশের অগণিত ভক্ত অনুরাগী। আধুনিক যুগে নারীরা খেলা শুধু বোঝেই না, উপভোগও করে। তার ওপর নিজের মতো কোনো দল পছন্দ করাও এক অনিবার্য বিষয় হয়ে যায়। একই পরিবারে সবাই সমদল পছন্দ করে না। এখানেও স্বামী-সন্তানের সঙ্গে গৃহিণীদের এক ধরনের খুনসুঁটি লেগেই থাকে। সেখানেও চলে বাগ্বিত-া, তর্ক-বিতর্ক। সবচেয়ে অসহনীয় অবস্থা হলো স্বামী-সন্তান ব্রাজিল।

গৃহকর্ত্রী নিজে আর্জেন্টিনা। খেলা দেখার আনন্দই থাকে না। কে জিতবে কে হারবে এই নিয়ে হয় পারিবারিক অশান্তি আর ঝামেলা। শুধু কি তাই? গৃহিণীকে সামলাতে হয় দক্ষ হাতে আহারের ব্যবস্থাটাও। সেখানে শুধু রাত গভীর হলে চা-নাস্তা নয় কিছু আগের নৈশভোজও একান্ত জরুরি। গৃহকর্তা যদি ভাবতে বসেন রুচিসম্মত খাবার খেতে খেতে জমিয়ে খেলা দেখা যাবে তাহলে তো গৃহিণীর আর নিস্তারই থাকে না।

রাত দিনের সাহায্যকারী সব বাসায় থাকেও না। ঠিকা বুয়ারা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করে দিয়ে বাসায় চলেও যায়। ফলে রাতের খাবার কিংবা গভীর রাতে চা-নাস্তা সবই ঘরের কর্ত্রীকেই করে দিতে হচ্ছে। এখানে একটি প্রাসঙ্গিক বিষয় উঠে আসাও সঙ্গত। মা কিংবা স্ত্রী যদি নিজেই কর্মজীবী হন তাহলে তার অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। সারা রাত না ঘুমিয়ে আহার তৈরি করে সকালে তাকেও যদি কর্মস্থলে যেতে হয় সেটা যে কতখানি বিড়ম্বনার সহজেই অনুমেয়।

তার ওপর আছে কোনো দল সমর্থন করা, পছন্দের দল জিতলে দ্বিগুণ শক্তি পাওয়া যায়। আর হারলে? সব কর্মক্ষমতা বিলুপ্ত হতেও যেন সময় লাগে না। আগেই বলেছি আধুনিক যুগে নারীরা শুধু পারিবারিক বলয়ে আটকে নেই। কর্মজীবন থেকে আরম্ভ করে বিনোদন জগত এমন কি খেলার ভুবনও তাদের কাছে এখন আরাধ্য বিষয়। সুতরাং বিশ্বকাপ ফুটবলের মাতানো ভিন্ন মাত্রার বিশ্বে নারীদের পদচারণা গত শতকের শেষ প্রান্ত থেকে।

আর একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের সূচনালগ্নে দাঁড়িয়ে বলা যায় মেয়েরা এখন শুধু খেলাই দেখে না- নিজেরাও মাঠে নামে খেলতে। কিছুদিন আগেও সাফ গেম বিজয়ী বাঙালি নারী ফুটবলাররা, হিমালয় জয় করে এলো। অভাবনীয় এক বিজয় গাথা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকল। সুতরাং বঙ্গললনারা সৌন্দর্যে, স্নেহে, মমতায় আর কমনীয়তার পুষ্পপেলব বন্ধনে আর আবদ্ধ নেই। শক্ত ফুটবল আর ভারি ক্রিকেট ব্যাট বলে পারদর্শিতা দেখিয়ে নিজেরা অপার মহিমায় সবাইকে চমৎকৃত করতেও সিদ্ধহস্ত।

সুতরাং খেলা করা ও দেখা এখন একচেটিয়া কোনো ব্যাপার নয়। নারী-পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত পদচারণায় খেলার মতো দুর্ভেদ্য বিশ্বও আজ নারীদের হাতের নাগালে; প্রসঙ্গক্রমে এমন সব অর্জন আমাদের শুধু উৎসাহিতই করে না বরং সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও নজরকাড়া করতে সর্বশক্তি প্রয়োগও করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তা দৃশ্যমান হয়ে সারাদেশকে মাতিয়ে দিয়ে সম্মানিতও করেছে।
আবারও ফিরে আসছি গৃহিণীদের বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় রাতে খাটাখাটনির বিষয়। সারাদিন পরিশ্রমের পর রাতে ঘুমানোটা খুব জরুরি হয়ে যায়। কিন্তু যে কোনো খেলা ক্রিকেট-ফুটবল যাই হোক না কেন তা দেখতে পারিবারিকভাবে সব সদস্যই অপেক্ষমাণ থাকে। আর গৃহিণীরা এখন খেলা দেখতে অভ্যস্তই শুধু নয় রীতিমতো উৎসাহী দর্শক বললে খুব বেশি বলা হবে না।

যাই হোক এখন পুরোদমে চলছে বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তেজনাপূর্ণ খেলাগুলো। ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা ছাড়াও ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান এদের মতো শক্তিশালী দলও সারা বিশ্বকে আনন্দ আর বেদনায় মাতিয়ে দিচ্ছে। যারা জিতে তারা খুশির জোয়ারে ভাসতে থাকে। যারা হারল দলে তারা যেন শোকে মুহ্যমান হয়ে যায়। হার-জিতের এমন টানাপড়েন পরিবেশে পারিবারিক স্বস্তিও মেলে কম। বিশেষ করে গৃহিণী নিজে যদি কোনো দলের সমর্থক হন। তার দল যদি হারে তিনিও তো স্বস্তিতে থাকেন না।

×