ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাছের ব্যবসায় রুম্পার সফলতা

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

প্রকাশিত: ০১:২৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

গাছের ব্যবসায় রুম্পার সফলতা

গাছের ব্যবসায় রুম্পার সফলতা

শখ থেকে যদি দারুণ কিছু হয়তাহলে মন্দ কীশখের বাগান থেকেই দারুণ কিছু করেছেন তিনিঘরে বসে গাছের ব্যবসা করে আয় করছেন ভালইপাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন সমানভাবেঘরেব সে শখ থেকে যদি আয় রোজগার হয় তাতে ক্ষতি কি! ফেরদৌসী লোমাত জাহান রুম্পা এমনটাই মনে করেনঅনলাইনে গাছ বিক্রি করেনবিএসসি ইন কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া তাঁর শেষের দিকেশৌখিন গাছপ্রেমীদের কাছে তিনি এক পরিচিত নাম

মা বাগান করতেননানু বাড়ির উঠানে ছিল নানা রকম গাছএ সব তাকে বাগান করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেফেসবুক কেন্দ্রিক গাছের গ্রুপগুলোর নানা রকম ইভেন্ট হয়রুম্পা নিয়মিত অংশ নেন এই সব ইভেন্টেখুব অল্প সময়ে মধ্যেই ১৫/১৬ রকমের জবা-গোলাপ, বিভিন্ন ইন্ডোর প্ল্যান্ট, জলজ প্ল্যান্ট, সার্কুলেন্ট এবং কয়েক ভ্যারাইটির ক্যাকটাস সংগ্রহ করেছিলেন তিনি

ইট পাথরের এই শহরে জায়গার বড় অভাবতাই সেভাবে বাগান বড় করা সম্ভব হয়নি তারবাগান করতে গিয়ে তিনি দেখলেন, বিভিন্ন রকম ইন্ডোর প্ল্যান্ট, ক্যাকটাসের প্রচুর চাহিদা রয়েছেমানুষ সুলভ মূল্যে এই গাছগুলো কিনতে চায়উন্নতমানের গাছ মানুষ যাতে সহজে ঘরে বসে পেতে পারেসে জন্য তিনি নিজেই গাছের ব্যবসায় নেমে পড়লেন২০২১ সালে এলকোভনামে একটি পেজে সেলার হিসেবে যুক্ত হনতাঁর নিজের পেজের নাম খবধভ-খড়াবএই পেজে গাছের অর্ডার দেয়ার সুযোগ আছে

রুম্পা ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এরিয়া পূর্ব কাফরলে বাবা, ছোট বোনসহ বসবাস করেন২০১৯ সালে তার মা মারা যানঅন্যের থেকে গাছ কিনে সেগুলো রুম্পা বিক্রি করেনতিনি জানান, থাইল্যান্ড থেকে ইম্পোর্ট করে বিভিন্ন ভ্যারাইটির ক্যাকটাস সার্কুলেন্ট ইউফোরিয়া এবং সেন্সেভেরিয়া জাতের গাছ আনা হয়কাঁটাযুক্ত হলেও রঙিন এই গাছগুলো মানুষের পছন্দের শীর্ষে

ক্যাকটাসের কাঁটা সৌন্দর্য ছাড়াও এর ফুল খুব সুন্দর, তাই ক্রেতাদের চাহিদা অনেকক্যাকটাস জাতীয় গাছ ছোট হওয়ায় টবে অল্প জায়গায় রাখা যায়লিলিয়াম, এ্যামারিলিস লিলি, রানানকুলাস, জাফরান, টিউলিপ, কসমস, পপি, গাজানিয়া, স্যালভিয়া, ডায়ান্থাস, ক্যালেন্ডুলা, পিটুনিয়া, ডেইজি, ভারবে না, হেলিক্রিসাম, এ্যান্টিরিনাম, লুপিন, কারনেশন, প্যানজি, এ্যাস্টারযাদের প্রয়োজনতারা রুম্পার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনবিভিন্ন গাছের বিচিত্র সংগ্রহ তাঁর

বর্তমানে তাঁর স্টকে প্রায় ৭০-৮০ প্রজাতির ক্যাকটাস এবং অন্যান্য নানা জাতের গাছ আছেগাছের মূল্য ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্তশুধু গাছ, বাল্ব বিক্রি নয়এগুলো কিভাবে লাগাতে হবে, যত্নআত্তিসবই ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেন রুম্পাতাঁর থেকে গাছ নিয়ে যখন অন্যরা ভাল করেগাছে সুন্দর ফুল ফোটেসে খবর জানতে পারলে রুম্পার খুব আনন্দ লাগে

তিনি বলেন, বীজ থেকে তারা যখন সেই চারা গাছ থেকে ফুল ফুটিয়ে আমাকে রিভিউ জানায় তখন কতটা প্রশান্তি আসে তা বলে বুঝানো যাবে নাআমাকে কাজেও অনুপ্রেরণা জাগায়তাদের এই আনন্দগুলো আমার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়তখন ভীষণ এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়

অনলাইনে ঘরে বসে নারী ব্যবসা করতেই পারেসে পরিবেশ, সুবিধা, সুযোগের কোনটারই কমতি নেইবরং অবসরটা হয়ে উঠতে পারে রঙিনএ জন্য পরিবারের সমর্থন বেশ জরুরীরুম্পা সেটা পেয়েছেনতার বাবা এই কাজে তাঁকে উসাহ দেনরুম্পা বলেন, বাবা কখনও কোন কাজে আমাকে বাধা দিয়েছে বলে আমার মনে পড়ে নাবরং তিনি এই কাজকে সম্মান দেনতিনি চান আমি আমার অন্য পেশার পাশাপাশি এই বাগান বিষয়ক কাজকে বরাবরের মতো সবসময় যেন প্রধান্য দেই

অন্য সব কাজের পাশাপাশি রুম্পার গাছের ব্যবসাসে কারণে ফুলটাইম সময় দিতে পারেন নাতবুও তার

মাসিক গড়ে আয় ১৫-২৫ হাজার টাকাআয়ের টাকার কিছু অংশ নিজের জন্য ব্যয় করেন তিনিআবার বাগানে বিনিয়োগও করেনশুধু কি আয়নিজের একটা অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন তিনিশূন্য থেকে উঠে এসেছেনএই বা কম কিসেরুম্পা বলেন, সবচেয়ে বড় কথা শূন্য থেকে নিজের অবস্থান কিছুটা হলেও পরিবর্তন করতে পেরেছি

রুম্পা মনে করেন, সবুজই প্রাণের স্পন্দনবেঁচে থাকার মূলমন্ত্রআগামী প্রজন্মকে উসাহিত করতে সবুজের প্রতি বোধোদয়ের জায়গাটা সজাগ করে তুলতে হবেতবেই ভাল থাকবে আমাদের আগামী প্রজন্ম

×