গাছের ব্যবসায় রুম্পার সফলতা
শখ থেকে যদি দারুণ কিছু হয়। তাহলে মন্দ কী। শখের বাগান থেকেই দারুণ কিছু করেছেন তিনি। ঘরে বসে গাছের ব্যবসা করে আয় করছেন ভালই। পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন সমানভাবে। ঘরেব সে শখ থেকে যদি আয় রোজগার হয় তাতে ক্ষতি কি! ফেরদৌসী লোমাত জাহান রুম্পা এমনটাই মনে করেন। অনলাইনে গাছ বিক্রি করেন। বিএসসি ইন কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া তাঁর শেষের দিকে। শৌখিন গাছপ্রেমীদের কাছে তিনি এক পরিচিত নাম।
মা বাগান করতেন। নানু বাড়ির উঠানে ছিল নানা রকম গাছ। এ সব তাকে বাগান করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ফেসবুক কেন্দ্রিক গাছের গ্রুপগুলোর নানা রকম ইভেন্ট হয়। রুম্পা নিয়মিত অংশ নেন এই সব ইভেন্টে। খুব অল্প সময়ে মধ্যেই ১৫/১৬ রকমের জবা-গোলাপ, বিভিন্ন ইন্ডোর প্ল্যান্ট, জলজ প্ল্যান্ট, সার্কুলেন্ট এবং কয়েক ভ্যারাইটির ক্যাকটাস সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।
ইট পাথরের এই শহরে জায়গার বড় অভাব। তাই সেভাবে বাগান বড় করা সম্ভব হয়নি তার। বাগান করতে গিয়ে তিনি দেখলেন, বিভিন্ন রকম ইন্ডোর প্ল্যান্ট, ক্যাকটাসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। মানুষ সুলভ মূল্যে এই গাছগুলো কিনতে চায়। উন্নতমানের গাছ মানুষ যাতে সহজে ঘরে বসে পেতে পারে। সে জন্য তিনি নিজেই গাছের ব্যবসায় নেমে পড়লেন। ২০২১ সালে ‘এলকোভ’ নামে একটি পেজে সেলার হিসেবে যুক্ত হন। তাঁর নিজের পেজের নাম ‘খবধভ-খড়াব’। এই পেজে গাছের অর্ডার দেয়ার সুযোগ আছে।
রুম্পা ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এরিয়া পূর্ব কাফরলে বাবা, ছোট বোনসহ বসবাস করেন। ২০১৯ সালে তার মা মারা যান। অন্যের থেকে গাছ কিনে সেগুলো রুম্পা বিক্রি করেন। তিনি জানান, থাইল্যান্ড থেকে ইম্পোর্ট করে বিভিন্ন ভ্যারাইটির ক্যাকটাস সার্কুলেন্ট ইউফোরিয়া এবং সেন্সেভেরিয়া জাতের গাছ আনা হয়। কাঁটাযুক্ত হলেও রঙিন এই গাছগুলো মানুষের পছন্দের শীর্ষে।
ক্যাকটাসের কাঁটা সৌন্দর্য ছাড়াও এর ফুল খুব সুন্দর, তাই ক্রেতাদের চাহিদা অনেক। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ ছোট হওয়ায় টবে অল্প জায়গায় রাখা যায়। লিলিয়াম, এ্যামারিলিস লিলি, রানানকুলাস, জাফরান, টিউলিপ, কসমস, পপি, গাজানিয়া, স্যালভিয়া, ডায়ান্থাস, ক্যালেন্ডুলা, পিটুনিয়া, ডেইজি, ভারবে না, হেলিক্রিসাম, এ্যান্টিরিনাম, লুপিন, কারনেশন, প্যানজি, এ্যাস্টারযাদের প্রয়োজন। তারা রুম্পার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। বিভিন্ন গাছের বিচিত্র সংগ্রহ তাঁর।
বর্তমানে তাঁর স্টকে প্রায় ৭০-৮০ প্রজাতির ক্যাকটাস এবং অন্যান্য নানা জাতের গাছ আছে। গাছের মূল্য ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। শুধু গাছ, বাল্ব বিক্রি নয়। এগুলো কিভাবে লাগাতে হবে, যত্নআত্তি। সবই ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেন রুম্পা। তাঁর থেকে গাছ নিয়ে যখন অন্যরা ভাল করে। গাছে সুন্দর ফুল ফোটে। সে খবর জানতে পারলে রুম্পার খুব আনন্দ লাগে।
তিনি বলেন, বীজ থেকে তারা যখন সেই চারা গাছ থেকে ফুল ফুটিয়ে আমাকে রিভিউ জানায় তখন কতটা প্রশান্তি আসে তা বলে বুঝানো যাবে না। আমাকে কাজেও অনুপ্রেরণা জাগায়। তাদের এই আনন্দগুলো আমার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়। তখন ভীষণ এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়।
অনলাইনে ঘরে বসে নারী ব্যবসা করতেই পারে। সে পরিবেশ, সুবিধা, সুযোগের কোনটারই কমতি নেই। বরং অবসরটা হয়ে উঠতে পারে রঙিন। এ জন্য পরিবারের সমর্থন বেশ জরুরী। রুম্পা সেটা পেয়েছেন। তার বাবা এই কাজে তাঁকে উৎসাহ দেন। রুম্পা বলেন, বাবা কখনও কোন কাজে আমাকে বাধা দিয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না। বরং তিনি এই কাজকে সম্মান দেন। তিনি চান আমি আমার অন্য পেশার পাশাপাশি এই বাগান বিষয়ক কাজকে বরাবরের মতো সবসময় যেন প্রধান্য দেই।
অন্য সব কাজের পাশাপাশি রুম্পার গাছের ব্যবসা। সে কারণে ফুলটাইম সময় দিতে পারেন না। তবুও তার
মাসিক গড়ে আয় ১৫-২৫ হাজার টাকা। আয়ের টাকার কিছু অংশ নিজের জন্য ব্যয় করেন তিনি। আবার বাগানে বিনিয়োগও করেন। শুধু কি আয়। নিজের একটা অবস্থান তৈরি করতে পেরেছেন তিনি। শূন্য থেকে উঠে এসেছেন। এই বা কম কিসে। রুম্পা বলেন, সবচেয়ে বড় কথা শূন্য থেকে নিজের অবস্থান কিছুটা হলেও পরিবর্তন করতে পেরেছি।
রুম্পা মনে করেন, সবুজই প্রাণের স্পন্দন। বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র। আগামী প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে সবুজের প্রতি বোধোদয়ের জায়গাটা সজাগ করে তুলতে হবে। তবেই ভাল থাকবে আমাদের আগামী প্রজন্ম।