
ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ সম্পর্কে সাধারণভাবে ধারণা হলো, এটি মস্তিষ্কে চুপিসারে শুরু হয়, যেখানে তা সরাসরি দেখা বা অনুভব করা যায় না— যতক্ষণ না স্মৃতিভ্রান্তি বা বিভ্রান্তি ধরা পড়ে। কিন্তু গবেষকেরা এখন এক অভিনব সংযোগ নিয়ে চিন্তা করছেন: আমাদের পা।
কেন স্বাস্থ্যবান পা মানে স্বাস্থ্যবান মস্তিষ্ক হতে পারে?
২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বয়সজনিত কারণে যারা ধীরে হাঁটেন, তাদের মস্তিষ্কের আয়তন তুলনামূলকভাবে ছোট এবং ভবিষ্যতে তাদের মানসিক দুর্বলতার আশঙ্কা বেশি থাকে। বিষয়টি কেবল হাঁটু ব্যথা বা পেশিশক্তি কমে যাওয়ার নয় — হাঁটা আসলে এক বিশদ মানসিক প্রক্রিয়া।
এই নিয়ে এমসির নিউরোসার্জন ড. অরুণ এল নায়েক (এম.চি.এইচ, নিউরোসার্জারি) যা বলছেন তা হলো:
পা যখন নড়ে, তখন মস্তিষ্কের একাধিক অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। হাঁটার প্রতিটি ধাপে কাজ করে–
-
ফ্রন্টাল লোব (পরিকল্পনার জন্য),
-
সেরিবেলাম (ভারসাম্যের জন্য),
-
স্পাইনাল কর্ড (স্নায়ু সংকেত পৌঁছাতে),
এমনকি পায়ের পাতাও স্পর্শ ও চাপ অনুভব করে তা মস্তিষ্কে পাঠায়।
অর্থাৎ শরীর ও মস্তিষ্কের এই মিলিত কাজ বোঝায়, হাঁটা শুধুই শারীরিক অনুশীলন নয়— এটি এক ধরনের সজীব মানসিক পরীক্ষাও। হাঁটার গতি বা ভঙ্গিতে সামান্য পরিবর্তনও হতে পারে স্মৃতিভ্রংশের আগাম সংকেত।
রক্তপ্রবাহ বাড়ায় স্মৃতিশক্তি
হাঁটার সময় রক্তসঞ্চালন বাড়ে, যা অক্সিজেন ও গ্লুকোজে ভরপুর রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছাতে সাহায্য করে। এতে মস্তিষ্ক যেমন পুষ্টি পায়, তেমনি ক্ষতিকর টক্সিনও দ্রুত দূর হয়।
অপরদিকে, দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা চলাফেরা না করলে রক্তপ্রবাহ কমে, মস্তিষ্ক ঝিমিয়ে পড়ে, আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা সংকুচিত হতে পারে।
মস্তিষ্কের ‘উদ্যানপালক’ সক্রিয় হয় হাঁটার মাধ্যমে
হাঁটা আরও একটি গোপন উপকার করে— এটি ব্রেইন-ডেরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF) নিঃসরণ বাড়ায়। এই উপাদানটি হলো মস্তিষ্কের ‘উদ্যানপালক’, যা নিউরনের বৃদ্ধি, সংযোগ তৈরি এবং দীর্ঘস্থায়ী বেঁচে থাকার সহায়ক।
নিয়মিত হাঁটলে BDNF বাড়ে, ফলে বয়স বাড়লেও মানসিক কর্মক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হয়। অর্থাৎ হাঁটা শুধু রক্ত নয়, মস্তিষ্কের খাবারও জোগায়।
পায়ের পেশিশক্তিও বোঝায় মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য
বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে পায়ের পেশিশক্তি আজকাল মস্তিষ্কের গোপন সূচক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শক্তিশালী পা মানে স্বাধীনতা ও চলনক্ষমতা ধরে রাখা, যা স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি কমায়।
পায়ের পেশি ভারসাম্য রক্ষা করে, পড়া ঠেকায়, আর তা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। হালকা ব্যালেন্স অনুশীলন, রেসিস্ট্যান্স ট্রেনিং বা কেবল মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে যাওয়া— সবই উপকারী। শরীরচর্চার লক্ষ্য বডি বিল্ডার হওয়া নয়, বরং চলনক্ষম ও স্থিতিশীল থাকা।
শুধু হাঁটা নয়, ‘স্মার্ট হাঁটা’
“বেশি হাঁটো, কম বসো”— এই পরামর্শ ঠিকই আছে, তবে আরও কার্যকর হতে পারে যদি হাঁটার সময় ব্রেইনকেও একসাথে কাজে লাগানো হয়। যেমন–
-
হাঁটার সময় গুনগুন করে গান গাওয়া,
-
কারও সঙ্গে কথা বলা,
-
সংখ্যা বা শব্দ খেলা খেলা।
এভাবে শরীর ও মস্তিষ্ক একসাথে সক্রিয় থাকে, মাল্টিটাস্কিং সক্ষমতা বাড়ে।
কোন লক্ষণগুলোতে সতর্ক হবেন?
১. হাঁটার গতি আগের চেয়ে কমে যাওয়া
২. ভারসাম্য রক্ষা করতে সমস্যা
৩. অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
৪. চলাফেরায় অনিচ্ছা বা ধীরতা
সানজানা