ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

আমাদের কেন বাড়ির রান্না খাবারই বেছে নেওয়া উচিত? হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ২৪ জুলাই ২০২৫

আমাদের কেন বাড়ির রান্না খাবারই বেছে নেওয়া উচিত? হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে

ছবিঃ সংগৃহীত

আজকালকার ব্যস্ত জীবনে বাইরের খাবার খাওয়া যেন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। একটা ক্লিকেই খাবার এসে যায় দরজায়, আর চটজলদি খেয়ে ফেলা যায়। কিন্তু একটু থেমে যদি ভাবি—এই স্বাচ্ছন্দ্যের পিছনে আমাদের স্বাস্থ্য, সম্পর্ক, মানসিক শান্তি ও টাকাপয়সার কেমন ক্ষতি হচ্ছে?

এই নিয়েই কথা বলেছেন হৃদরোগ ও বুকের অপারেশনের বিশেষজ্ঞ ডঃ জেরেমি লন্ডন। ইনস্টাগ্রামে তিনি প্রায়ই হৃদয়সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে পোস্ট করেন। এবার তিনি শেয়ার করেছেন ৫টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ—কেন আমাদের বেশি করে বাড়ির রান্না খাওয়া উচিত, বাইরের খাবারের চেয়ে।

১. খাবারে আপনি জানেন কী পড়ছে, কী পড়ছে না
বাইরের খাবারে চিনি, লবণ, নানা ধরণের অপরিচিত তেল—সবই থেকে যায় লুকিয়ে। আপনি বুঝতেই পারেন না আপনার শরীরে কী ঢুকছে। কিন্তু নিজের রান্নায় আপনি জানেন—কী দিয়ে রান্না করছেন, কোন উপাদানটা কমাবেন বা বাড়াবেন। এটাই হল সচেতন খাওয়া।

ডঃ লন্ডনের কথায়, “যখন আপনি নিজে রান্না করেন, আপনি ঠিক করেন কী থাকবে, কী থাকবে না। এতে প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া যায়, আর আসল খাবারের পুষ্টি পাওয়া যায়।”

২. টাকা বাঁচে, বাজেট ঠিক থাকে
রেস্তোরাঁয় একবার খাওয়া মানে কয়েকশো টাকা একসাথে উড়ে যাওয়া। আবার একই টাকায় আপনি বাড়িতে একাধিক বার রান্না করে খেতে পারেন।

“ঘরেই রান্না করলে প্রতিবার অর্ডার করার খরচ বেঁচে যায়। আপনি সাপ্তাহিক বাজার করে পুরো সপ্তাহের খরচ কমাতে পারেন,” বলছেন ডঃ লন্ডন।

৩. স্বাস্থ্য ভালো থাকে, রোগ দূরে থাকে
অনেকেই জানেন না, নিয়মিত বাইরের খাবার খাওয়া ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষতি করে। বাড়ির রান্নায় তেল-নুন কমানো যায়, বেশি শাকসবজি রাখা যায়, আর খাবারও থাকে বেশি সতেজ।

“গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত বাড়ির রান্না খায়, তাদের মধ্যে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতার আশঙ্কা অনেকটাই কম,” বলেন এই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।

৪. খাওয়ার পরিমাণ আপনি ঠিক করেন
রেস্তোরাঁয় খাবারের পরিমাণ প্রায়ই বেশি থাকে। ফলে আমরা না চাইলেও অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। কিন্তু বাড়িতে আপনি নিজেই প্লেটে তুলে নেন, কতটুকু খাবেন—আপনার হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকে।

“বাড়িতে রান্না করলে শুধু কী খাবেন তাই নয়, কতটা খাবেন সেটাও আপনি ঠিক করেন,” বলেন ডঃ লন্ডন।

৫. সম্পর্ক ও আত্মিক সংযোগ গড়ে ওঠে
রান্নাঘর শুধু খাবার তৈরির জায়গা নয়, এটা সম্পর্ক তৈরিরও জায়গা। পরিবারের সবাই মিলে রান্না করা, গল্প বলা, একসাথে খাওয়া—এই অভ্যাসগুলো সম্পর্কের বন্ধন আরও গভীর করে। এমনকি আপনি একা থাকলেও, নিজের জন্য ভালো কিছু রান্না করা মানে নিজেকে ভালোবাসা।

“রান্নার সময়টা পরিবার, বন্ধু বা নিজের সঙ্গে কাটানো একটা সুন্দর মুহূর্ত হতে পারে,” বলেন তিনি।

একটু সময় দিন নিজের জন্য
আজকের ব্যস্ত দুনিয়ায় একটু ধীর হতে শেখা, নিজের শরীর-মন ও প্রিয়জনদের জন্য সময় বের করা জরুরি। আর তার সবচেয়ে সহজ শুরু হতে পারে রান্নাঘর থেকেই।
বাড়ির রান্না মানেই শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার নয়—এটা এক ধরণের আত্মিক যত্নও।

দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য। কোনও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যায় দয়া করে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

মারিয়া

×