
একসময় মানুষ নিজের পরিচয় চিনত পরিবার, কাজ বা স্বপ্ন দিয়ে। আজকের দিনে পরিচয়ের মানদণ্ড যেন দাঁড়িয়ে গেছে ফেসবুক প্রোফাইলে।
কে কয়টা লাইক দিল? কে স্টোরি দেখল? কারা ইনবক্সে “Seen” করে গেল?—এসব প্রশ্নেই দোদুল্যমান আমাদের আত্মমর্যাদা।
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের কানেকশন দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ধীরে ধীরে কেড়ে নিচ্ছে নিজের চোখে নিজেকে দেখার সাহস। আমরা ভুলে গেছি আত্মপরিচয় তৈরি হয় আত্মবিশ্বাসে, অর্জনে, ব্যর্থতা টপকে বেঁচে থাকার শক্তিতে—কোনো প্রোফাইল পিকচারে নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র মেহেদী হাসান বলেন—
“একদিন মোবাইল হারিয়ে গেলে মনে হলো আমি হারিয়ে গেছি। কেউ আমার খোঁজ নেয় না, কারণ আমি ফেসবুকে ‘অ্যাক্টিভ’ না।”
এই কথাটা শুধু তার না, বরং আমাদের অনেকের মনের কথাই।
একদিন ছবি না দিলে, মনে হয় আমি গুরুত্বহীন। অথচ হয়তো পাশের রুমেই কেউ অপেক্ষা করছে, একটু গল্প করার জন্য। কিন্তু মন বলছে—“স্টোরি আগে দেই, পরে দেখা হবে।”
তরুণদের অনেকেই সকাল শুরু করে ফেসবুকের নোটিফিকেশন দেখে, আর রাত শেষ করে কারা রিঅ্যাক্ট করল সেটা গুনে।
কেউ খুশি হলেও ফিল্টার ছাড়া হাসতে পারে না, কেউ কাঁদলেও ক্যামেরার ফ্রেমে নিজেকে ‘স্ট্যাবল’ দেখায়।
একজন অনলাইন ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন—
“আমার কিছু ক্লায়েন্ট রাতে ঘুমাতে পারে না, কারণ কেউ তাদের পোস্টে লাইক দেয়নি। তারা ভাবে—তাদের গুরুত্ব কমে গেছে!”
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এভাবে তৈরি হয় ভার্চুয়াল আসক্তি + আত্মমূল্যহীনতা—যা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ফেসবুক জিজ্ঞেস করে—“What’s on your mind?”
কিন্তু অনেকেই বলতে পারছে না, কারণ—“আমার মনেই তো আমি নেই!”
প্রতিদিন নিজের চেহারা পাল্টানো যায় ছবি ফিল্টার দিয়ে, কিন্তু মনের মুখ চিনে নেওয়া—এই কাজটাই এখনকার সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
কারো ফলোয়ার ৫ হাজার, কিন্তু বন্ধু বলতে নেই কেউ।
কারো ইনবক্স ভরা, কিন্তু পাশে দাঁড়ায় না কেউ।
এভাবেই গড়ে উঠছে এক ভয়াবহ ভার্চুয়াল সমাজ, যেখানে নিজেকে তুলে ধরা বেশি, বোঝা কম।
চলুন, একদিন নিজের সঙ্গে চুপচাপ বসি।
না ফোনে, না স্ক্রিনে—শুধু নিজের ভেতরে।
দেখি, আমি কে?
আমি কি একজন ‘Seen’ হওয়া নাম?
নাকি একজন যার চিন্তা, স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাস আছে?
পরিচয় কখনো স্ট্যাটাস দিয়ে গড়ে না—
পরিচয় তৈরি হয়, নিজেকে জানার সাহস থেকে।
Jahan