
বর্ষার রসে ভরা আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৌসুমি ফলসম্ভার ষড়ঋতুর দেশ, আমাদের এ দেশ। তার মধ্যে বর্ষা ঋতু নিয়ে আসে সজীবতা, স্নিগ্ধতা আর অফুরন্ত ফলের সম্ভার। মেঘ-বৃষ্টি আর নরম রোদের ছোঁয়ায় আমাদের দেশজ গাছপালা এক নতুন প্রাণ পায়। বর্ষাকালে গ্রামীণ হাট-বাজার থেকে শহরের অলিগলি পর্যন্ত নানান রসালো ও পুষ্টিকর মৌসুমি ফলের ছড়াছড়ি দেখা যায়।
বর্ষা কালের প্রধান প্রধান ফল
কাঁঠাল
বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠালের প্রকৃত মৌসুমই হলো বর্ষাকাল। গাছভরা বড় বড় কাঁঠাল গ্রামবাংলার চেনা দৃশ্য। কাঁঠালের কোয়া রসালো ও মিষ্টি। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ, সি ও ক্যালসিয়াম। কাঁঠালের বীজও পুষ্টিকর।
লিচু
যদিও লিচু মূলত গ্রীষ্মের শেষ দিকে পাকে, বর্ষার শুরুর সময়েও লিচুর স্বাদ পাওয়া যায়। লালচে লিচুর রসালো শাঁস তৃষ্ণা মেটায় আর শরীরকে শীতল রাখে।
আনারস
বর্ষার অন্যতম ফল আনারস। এর টক-মিষ্টি স্বাদ খাবারে ভিন্নতা আনে। আনারসে রয়েছে ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
জাম
বর্ষায় গ্রামের রাস্তার ধারে বা বনের পাশে বড় বড় জাম গাছে থোকায় থোকায় কালো বেগুনি রঙের জাম ফলে। জাম খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও উপকারী।
আম
বর্ষার প্রথম দিকে থাকে আমের প্রাচুর্য। গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি প্রভৃতি নানা জাতের আম খাওয়া যায় এই সময়ে। আমে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
কদবেল
বর্ষাকালে কদবেল সহজলভ্য হয়। এর টক-ঝাল মিশ্রিত স্বাদ আর পুষ্টিগুণ আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সহায়ক।
পেয়ারা
বর্ষার শেষ দিকে বাজারে আসে তাজা পেয়ারা। এটি ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস।
বর্ষার ফলে পুষ্টি ও উপকারিতা
বর্ষাকালের ফলগুলো শুধু স্বাদে বৈচিত্র্য আনে না, আমাদের শরীরের জন্যও খুব উপকারী। এ সময় আবহাওয়ার পরিবর্তনে নানা রোগব্যাধি দেখা দেয়। এই সময়ের ফলগুলো দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি ঠিক রাখে এবং পেটের নানা সমস্যা দূর করে।
বর্ষাকাল আমাদের প্রকৃতি ও জীবনযাত্রায় এক অনন্য সৌন্দর্য যোগ করে। আর এই সৌন্দর্যকে আরো প্রাণবন্ত করে তোলে বর্ষার মৌসুমি ফলসম্ভার। আমাদের উচিত এই সময়ের দেশজ ফলগুলো খাওয়া এবং এর পুষ্টিগুণ কাজে লাগানো। বর্ষাকালের ফল খেয়ে সুস্থ থাকা আর দেশীয় কৃষককে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেওয়াও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
রাজু