
ছবি: সংগৃহীত
শরীরে জমা হওয়া ক্ষতিকারক টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে কিছু নির্দিষ্ট খাবার অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে এই খাবারগুলো যোগ করলে লিভার ও কিডনির মতো অঙ্গগুলো আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারে এবং শরীর ভেতর থেকে পরিষ্কার থাকে।
এখানে এমন ৫টি খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো যা শরীরের টক্সিন উপাদান বের করতে সাহায্য করে:
১. লেবু: লেবু একটি শক্তিশালী ডিটক্সিফাইং ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড লিভারের ডিটক্সিফিকেশন এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। সকালে উষ্ণ পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে তা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে খুবই কার্যকর।
২. বিটরুট (বিট): বিটরুট অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নাইট্রিক অ্যাসিডে ভরপুর একটি সবজি। এটি প্রাকৃতিকভাবে রক্ত পরিষ্কার করতে এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে দারুণ সহায়ক। বিটরুটে থাকা বিটাসায়ানিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্ত থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। এটি কিডনির স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। নিয়মিত বিটরুটের রস পান করা বা সালাদ হিসেবে খাওয়া শরীরকে ডিটক্সিফাই করার একটি চমৎকার উপায়।
৩. হলুদ: প্রাচীনকাল থেকেই হলুদকে একটি শক্তিশালী ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হলুদে থাকা সক্রিয় উপাদান 'কারকিউমিন' একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে এবং ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাবারে হলুদ ব্যবহার করলে বা হলুদ মেশানো দুধ পান করলে শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
৪. রসুন: রসুনে প্রচুর পরিমাণে সালফার থাকে, যা লিভারকে টক্সিন দূর করতে এবং শরীর থেকে ভারী ধাতু অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা অ্যালিসিন নামক যৌগ ডিটক্সিফিকেশন এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে। রসুন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল গুণসম্পন্ন হওয়ায় এটি শরীরকে অভ্যন্তরীণভাবে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রসুন যোগ করা শরীরের জন্য উপকারী।
৫. সবুজ শাকসবজি (বিশেষ করে পালং শাক ও ক্রুসিফেরাস সবজি): পালং শাক, কেল, ব্রোকলি, ফুলকপি, ব্রাসেলস স্প্রাউট এবং বাঁধাকপির মতো সবুজ ও ক্রুসিফেরাস সবজিতে ক্লোরোফিল, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন সালফার-ভিত্তিক যৌগ থাকে। ক্লোরোফিল রক্তপ্রবাহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করে। অন্যদিকে, ক্রুসিফেরাস সবজিগুলিতে থাকা গ্লুকোসিনোলেটস ডিটক্সিফাইং এনজাইম তৈরি করে, যা শরীর থেকে কার্সিনোজেন এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক যৌগ দূর করতে সাহায্য করে। এগুলোতে থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়।
এই খাবারগুলো নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখলে শরীরের প্রাকৃতিক ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে। তবে, কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে বা ডিটক্স ডায়েট শুরু করার আগে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সাব্বির