ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সিদ্ধ ডিম: সুপারফুড নাকি নীরব ঘাতক? আসল রহস্য জানলে চমকে যাবেন!

প্রকাশিত: ০১:৪৯, ১১ জুন ২০২৫

সিদ্ধ ডিম: সুপারফুড নাকি নীরব ঘাতক? আসল রহস্য জানলে চমকে যাবেন!

ছবি: সংগৃহীত।

সকালে নাস্তার টেবিলে হোক বা বিকেলের জলখাবারে, সিদ্ধ ডিম অনেকেরই পছন্দের একটি খাবার। সহজলভ্য, সহজে তৈরি করা যায় এবং দামেও সাশ্রয়ী হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। কিন্তু পুষ্টিগুণ বিচারে সিদ্ধ ডিম কতটা স্বাস্থ্যকর? এটি কি সত্যিই একটি সুপারফুড, নাকি এর কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে?

চলুন, সিদ্ধ ডিমের পুষ্টিগুণ এবং এর স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও দিকগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সিদ্ধ ডিমের পুষ্টিগুণ
একটি মাঝারি আকারের সিদ্ধ ডিমে প্রায় ৭৭ ক্যালরি থাকে। এর পুষ্টি উপাদানগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. প্রোটিন: সিদ্ধ ডিম উচ্চ-মানের প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। একটি ডিমে প্রায় ৬ গ্রামের বেশি প্রোটিন থাকে, যা শরীরের পেশি গঠন, মেরামত এবং সামগ্রিক কোষীয় কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। ডিমে থাকা প্রোটিনকে "সম্পূর্ণ প্রোটিন" বলা হয় কারণ এতে মানবদেহের প্রয়োজনীয় সব অ্যামিনো অ্যাসিড সঠিক অনুপাতে বিদ্যমান।
২. ভিটামিন: সিদ্ধ ডিমে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • ভিটামিন A: দৃষ্টিশক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন D: হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে।
  • ভিটামিন E: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
  • ভিটামিন B12: স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা এবং রক্তকণিকা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ফোলেট (B9): কোষ বিভাজন এবং ডিএনএ সংশ্লেষণে সহায়তা করে।

৩. খনিজ পদার্থ: ডিমে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যেমন:

  • আয়রন: রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে।
  • ফসফরাস: হাড় ও দাঁতের গঠন এবং শক্তি উৎপাদনে অপরিহার্য।
  • সেলেনিয়াম: শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বজায় রাখে।
  • জিঙ্ক: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং কোষের বৃদ্ধিতে সহায়ক।
  • কোলিন: ডিম কোলিনের একটি অন্যতম সেরা উৎস। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য, স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা এবং কোষের মেমব্রেন গঠনে কোলিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য কোলিন গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক।

৪. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ডিমে লুটেইন (Lutein) এবং জিয়াজ্যান্থিন (Zeaxanthin) নামক দুটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এগুলো বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার অবক্ষয় (AMD) এবং ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

সিদ্ধ ডিমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
সিদ্ধ ডিমের নিয়মিত সেবন অনেক স্বাস্থ্যগত সুবিধা দিতে পারে:

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকায় এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে: ভিটামিন D এবং ফসফরাসের উপস্থিতির কারণে ডিম হাড় ও দাঁতের গঠনে এবং মজবুত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়: কোলিন মস্তিষ্কের বিকাশে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক।
  • চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: লুটেইন এবং জিয়াজ্যান্থিন চোখের কোষগুলোকে ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
  • পেশী গঠনে সাহায্য করে: উচ্চ-মানের প্রোটিনের কারণে ডিম পেশী গঠন ও মেরামতের জন্য একটি আদর্শ খাবার, বিশেষ করে যারা শরীরচর্চা করেন।
  • রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক: ডিমে থাকা আয়রন রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

সিদ্ধ ডিম কি কোলেস্টেরল বাড়ায়?
দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধ ডিমকে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ানোর জন্য দায়ী করা হতো। একটি ডিমে প্রায় ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে। তবে আধুনিক গবেষণা বলছে, খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করা কোলেস্টেরল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধিতে খুব সামান্য প্রভাব ফেলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে বেশি ভূমিকা রাখে। তাই, পরিমিত পরিমাণে ডিম সেবন বেশিরভাগ সুস্থ মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। এমনকি, ডিম এইচডিএল (HDL) বা "ভালো" কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

কারা ডিম খাবেন সাবধানে?
যাদের নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে, তাদের ডিম খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত:

ডায়াবেটিস রোগী: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত ডিমের সেবন কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডিমের অ্যালার্জি: কিছু মানুষের ডিমে অ্যালার্জি থাকতে পারে। ডিম খাওয়ার পর যদি ত্বকে ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট বা পেটে ব্যথা হয়, তাহলে এটি ডিমের অ্যালার্জির লক্ষণ হতে পারে।


সিদ্ধ ডিম নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এটি প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি চমৎকার উৎস, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে প্রতিদিন এক থেকে দুটি সিদ্ধ ডিম বেশিরভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। তবে, যেকোনো খাদ্য পরিবর্তনের আগে বা স্বাস্থ্যগত বিশেষ কোনো উদ্বেগের ক্ষেত্রে একজন পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

নুসরাত

×