ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যে ৫ মানসিকতা আপনাকে সমৃদ্ধির পথে টেনে তোলে

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:২৪, ২৫ মে ২০২৫

যে ৫ মানসিকতা আপনাকে সমৃদ্ধির পথে টেনে তোলে

ছবিঃ সংগৃহীত

ধনীরা কি আলাদা কোনো জিন নিয়ে জন্ম নেন? গবেষণা বলছে—না। আসলে ধনীদের সাফল্যের পেছনে থাকে কিছু নির্দিষ্ট মানসিকতা, যা ধীরে ধীরে গড়ে তোলা যায়। আমেরিকান লেখক স্টিভ বার্নস তার সাম্প্রতিক প্রবন্ধে জানিয়েছেন, ধনীরা যে মানসিক কাঠামোতে চিন্তা করেন, সেটিই তাদের সাফল্যকে নির্ধারণ করে দেয়।

মনোবিজ্ঞান ও আচরণগত অর্থনীতির বিভিন্ন গবেষণার ভিত্তিতে তিনি পাঁচটি প্রধান মানসিকতার কথা তুলে ধরেছেন, যেগুলো ধনীদের ধনী করে তুলেছে। এই মানসিকতাগুলো অর্থ উপার্জনের উপায় শেখায়, সমস্যা মোকাবিলায় ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলে।

চলুন জেনে নিই সেই পাঁচটি 'ধনী মানসিকতা' কী কী—

১. উন্নয়নমুখী মানসিকতা

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যারল ডুয়েকের গবেষণায় দেখা যায়, উন্নয়নমুখী মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ বিশ্বাস করেন যে প্রতিভা, বুদ্ধিমত্তা এবং দক্ষতা প্রচেষ্টা ও চর্চার মাধ্যমে বাড়ানো সম্ভব। বিপরীতে, যাদের 'স্থির মানসিকতা' আছে, তারা মনে করেন এসব গুণ স্থির এবং অপরিবর্তনীয়।

অর্থনৈতিক সাফল্যে এই পার্থক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেসব মানুষ উন্নয়নমুখী, তারা আর্থিক ব্যর্থতাকে স্থায়ী পরাজয় নয়, বরং শেখার সুযোগ হিসেবে দেখেন। তারা প্রশ্ন করেন, "আমি কী শিখলাম?"—এবং সেখান থেকে সামনে এগিয়ে যান।

২. দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা

আর্থিক সফলরা স্বল্পমেয়াদি লাভের পিছনে ছোটেন না; তারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেন। সঞ্চয়, বিনিয়োগ ও ধৈর্যের মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেন। এই মানসিকতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুদে-আসলে ফিরে আসে।

৩. অর্থের পেছনে নয়, সমস্যার সমাধানে মনোযোগ

সফল উদ্যোক্তারা নিজের লাভের কথা আগে ভাবেন না; তারা প্রথমে অন্যের সমস্যা সমাধানে মন দেন। এটাই তাদের মূল্য তৈরি করে, এবং সেই মূল্যই পরে অর্থে পরিণত হয়। এটাই টেকসই সম্পদ অর্জনের আসল পথ।

৪. সীমাবদ্ধ নয়, সম্ভাবনার দিকে দৃষ্টি

'দারিদ্র্য মানসিকতা' বলে, "সব কিছু সীমিত, আমি পাব না।" কিন্তু 'প্রাচুর্যের মানসিকতা' বিশ্বাস করে, "সম্ভাবনা অশেষ, সবার জন্য কিছু না কিছু আছে।" এই বিশ্বাসই মানুষকে ঝুঁকি নিতে, বড় স্বপ্ন দেখতে এবং সেগুলো বাস্তবায়নে সাহসী করে তোলে।

৫. ভাগ্য নিজের হাতে তুলে নেওয়া

মনোবিজ্ঞানী জুলিয়ান রটার “লোকাস অফ কন্ট্রোল” ধারণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন, যারা মনে করেন তারাই নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেন (অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ), তারা অধিক সফল হন। এই মানসিকতা মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে শেখায়, দায় স্বীকার করতে শেখায় এবং সমস্যার মধ্যেও আশার আলো খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

এই মানসিকতা গড়তে কিছু অভ্যাস কাজে লাগে—যেমন: প্রতিদিনের সিদ্ধান্ত লিখে রাখা, নিজেকে নিয়মিত মূল্যায়ন করা, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ। এতে ব্যক্তি তার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ফলাফলের সম্পর্ক উপলব্ধি করতে শেখে।


স্টিভ বার্নস বলছেন, এই পাঁচটি মানসিকতা—উন্নয়নমুখী চিন্তা, দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি, সমস্যা সমাধানভিত্তিক কাজ, প্রাচুর্যের বিশ্বাস এবং দায়িত্বশীলতা—ধনীদের মানসিক কাঠামো তৈরি করে। এগুলো কোনো জন্মগত গুণ নয়, বরং চর্চার মাধ্যমে অর্জনযোগ্য।

অর্থনৈতিক সাফল্য শুরু হয় মানসিকতা থেকে। যেকোনো ব্যক্তি এই মানসিকতাগুলো চর্চা করলে কেবল অর্থ নয়, জীবনদর্শনেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেন।

মুমু

×