ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

চাকমা মোটিফ

অপরাজিতা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:০২, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চাকমা মোটিফ

পশ্চিমা পোশাকের অনেক চাহিদার কারণে উপজাতীয় ফ্যাশন তার আবেদন হারিয়েছে

আজকাল পশ্চিমা পোশাকের অনেক চাহিদার কারণে উপজাতীয় ফ্যাশন তার আবেদন হারিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম তানজেনা মাহবুব, যিনি শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক। জাতিগত পোশাকের সেই হারানো আকর্ষণ ফিরিয়ে আনতে তিনি বদ্ধপরিকর।

তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট করে তানজেনা বলেছেন, ‘শুরু থেকেই আমি সব সময় তাঁত কাপড় নিয়ে কাজ করতে চাই এবং এক্ষেত্রে আমার গবেষণা অধ্যয়ন চালিয়ে যাই। একজন বাংলাদেশী ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে চাই, আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রথমে এই দেশের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানুক যেন তারা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন টেক্সটাইল অন্বেষণ করতে পারে। আমি আমার ডিজাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শন করার লক্ষ্য রাখি।

যারা তাদের পোশাকের মাধ্যমে তাদের সাংস্কৃতিক গর্ব প্রকাশ করতে চায়, তারা আমার ফিউশন পরিধানের সংগ্রহ হাইলাইট করে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশী পোশাকের উৎসাহীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে এই উদ্ভাবক আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী তাঁত কৌশল আবিষ্কার করেছেন। এই উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গিটি তার শিক্ষার দর্শনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, যা শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাংলাদেশের তাঁত বস্ত্রের সন্ধান করতে এবং স্থানীয় কারিগরদের সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করে।

অন্যদিকে একই সঙ্গে কারিগর ও কাপড়ের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করে। ফ্যাশন ডিজাইনার মাহবুবের একাডেমিক সাধনা, বিশেষ করে তার মাস্টার্সের থিসিস ঐতিহ্যগত তাঁত কাপড়ের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার ফলে চাকমা সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তার নিমগ্ন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, তিনি অনন্য মোটিফগুলো আবিষ্কার করেছিলেন যা প্রতিটি উপজাতীয় গোষ্ঠীর পরিচয়কে সংজ্ঞায়িত করে।

মাহবুব গবেষণা করে দেখেন যে, চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে শুধুমাত্র মহিলা তাঁতি আছে। তাই তিনি জাতিগত তাঁত কাপড় দ্বারা উপস্থাপিত ফ্যাশনের সুযোগ অন্বেষণ করে চাকমা সম্প্রদায়ের উপজাতীয় মহিলাদের দ্বারা সুন্দরভাবে তৈরি করার প্রয়াস হাতে নিয়েছেন। এই নিমিত্তে দীর্ঘ সময় ধরে মাহবুব রাঙ্গামাটিতে বহুবার সফর করেছেন। তিনি উপজাতীয় নারী তাঁতিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

সেখানকার তাঁতিদের বুননের প্রতি অটল প্রতিশ্রুতি মাহবুবকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এরপর চাকমা পোশাকের ঐতিহ্যবাহী বয়ন কৌশল, প্রাণবন্ত রং এবং জলবায়ুবান্ধব কাপড় থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে মাহবুব দক্ষতার সঙ্গে এই উপাদানগুলোকে তার ডিজাইনে অন্তর্ভুক্ত করেন। 

অনন্য চাকমা মোটিফ প্রধান থিম হিসেবে ব্যবহার করে, তিনি পরিবেশবান্ধব মটকা সিল্ক এবং কারিগরদের দ্বারা সঞ্চালিত প্যাচওয়ার্ক এবং কারচুপি সুইওয়ার্কের মতো উদ্ভাবনী কৌশল নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। এর ফলে এমন একটি সংগ্রহ তৈরি হয়েছে যা কেবল স্থায়িত্বই নয় বরং বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকেও তুলে ধরে।

তানজেনা মাহবুবের মধ্যে কেবল একজন শিক্ষাবিদ বা ডিজাইনারকে নয় বরং একজন স্বপ্নদর্শীকে খুঁজে পাওয়া যায়, যিনি সৃজনশীলতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রকৃত চেতনাকে মূর্ত করে তোলেন। তার অগ্রণী প্রচেষ্টার মাধ্যমে, তিনি শুধু বাংলাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের উত্তরাধিকারকে সম্মান করেননি বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উপজাতীয় ফ্যাশনের প্রশংসা ও সংরক্ষণের পথও প্রশস্ত করেছেন।
অপরাজিতা ডেস্ক

×