ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

ফরিদা ইয়াসমিন জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন 

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:১৫, ৯ আগস্ট ২০২৪

ফরিদা ইয়াসমিন জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন 

ফরিদা ইয়াসমিন

ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার কৃষ্ণপুরা গ্রামের সবুজ ছায়ায় বড় হওয়া সরকারি কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন। পল্লী বালার শ্যামল প্রান্তরের সুনিবিড় পরিবেশে আপ্লুত ফরিদা শুরুতেই জন্মস্থান নিয়ে বিগলিত, আনন্দিত। শৈশব-কৈশোর পার করে জীবনের পালাক্রমে কত স্মৃতি, মনোমুগ্ধকর আবেশ এখনো অন্তরের নিভৃত বোধে জিইয়ে আছে।

তারই অনুরণন আপন অভিব্যক্তির উচ্ছ্বসিত বাতাবরণে। কৃতিত্ব শুধু নিজেকেই সুশিক্ষিত করাই নয় বরং নিভৃত পল্লীর নৈসর্গিক আঙিনাকে জ্ঞান চর্চার সাধনযজ্ঞে পরিণত করাই ছিল পরম ইচ্ছাশক্তির দৃঢ় মনোবল। সঙ্গত কারণে পাঠাভ্যাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম পাঠাগার তৈরির প্রবল তাড়নায় সমর্পিত হতেও সময় লাগেনি। তবে পাঠাগার নয় এখন আলোকপাত করতে চাই ফরিদার জীবনবোধ আর শিক্ষা কার্যক্রমের বহুবিধ শুভ যাত্রা।
১৯৭৭ সালে জন্ম নেন ফরিদা নিজ গ্রামের অনন্য প্রাকৃতিক সম্ভারের ¯িœগ্ধ পরিবেশে। আর জন্মটাই ছিল জীবনের হরেক যাত্রার প্রথম সূর্যোদয়। পিতা শেখ মোহাম্মদ আবদুল গনি। মাতা মনিরা খাতুন। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে ফরিদা জ্যেষ্ঠ কন্যা। কৃষ্ণপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মেধা ও মননে ১৯৮৬ সালে পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ হন।

শুধু তাই নয় বৃত্তি পাওয়ার অনন্য সৌভাগ্যও শিক্ষা জীবনের প্রাথমিক স্তরের পরম নির্মাল্য। ১৯৮৭ সালে ধানকোড়া গিরীশ ইনস্টিটিউট উচ্চ বিদ্যালয়, সাটুরিয়া মানিকগঞ্জে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। মেধার ধারাবাহিক স্ফুরণে অষ্টম শ্রেণিতেও বৃত্তি পাওয়া এই সফল ছাত্রী নিজের কৃতিত্বকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নেন।
সংশ্লিষ্ট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে তারকা খচিত চিহ্নে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়া সক্ষমতার সিঁড়িকে আরও জোর কদমে ডিঙিয়ে যাওয়া। আর বোধহয় পেছন ফিরে তাকাতেই হয়নি। মেধা বৃত্তিও শিক্ষা জীবনের অনুষঙ্গ হয়েই থাকল। ১৯৯৪ সালে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ থেকে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পার করেন সাবলীলতা আর পরম বিচক্ষণতায়।

এরপর একেবারে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে যেন আপন সক্ষমতাকে পুনরায় প্রমাণ করা। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ¯œাতক (সম্মান) ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা তার গ্রামের প্রথম একজন মেধাবী নারী শিক্ষার্থী। সেটা শুরু হয় একেবারে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর আলোকিত ধারায়। এর পরের যাত্রা পেশাগত জীবনে আপন কৃতিত্বের গৌরবময় অধ্যায়।

তিনি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের কৃতী শিক্ষার্থী। তেমন পালাক্রমে পেশা নির্বাচনও ছিল এক পরম আরাধ্য বিষয়। সেখানেও বিন্দুমাত্র পিছু না হটার কাহিনী চমকপ্রদ ও স্বস্তিদায়ক। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের আওতায় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাকেও সফলতার সঙ্গে আয়ত্বে আনেন। ২০০৬ সালে শিক্ষা ক্যাডারে সরকারি চাকরিতে যোগদান ছিল জীবনের পরম লক্ষ্যে সমর্পিত হওয়া।

তার আগেই ২০০৩ সালেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘প্রধান শিক্ষকের’ পদ অলঙ্কৃত করে আপন কর্মজীবনকে স্বাগত জানালেন। কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই পেশাগত জীবনের শুভ সূচনা। ২০১৮ সালে অর্জন করলেন গবেষণামূলক শিক্ষা কার্যক্রম এমফিল ডিগ্রি। বর্তমানে পিএইচডি গবেষণায় নিজেকে নিবেদন করেছেন। ঘরনি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আবুল মোমেন মিল্টনের সঙ্গে।

তবে কৃষ্ণপুরা গ্রামে তিনিই প্রথম নারী হিসেবে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমে বরাবরই এগিয়ে থেকেছেন। মনের মধ্যে কষ্ট-বেদনায় অনুভব করেন কেন নারীদের এত পশ্চাদগামিতা? বিশেষ করে শিক্ষা এবং কর্মজীবনে? সুশিক্ষিত সরকারি এই বিশেষ কর্মকর্তার পরম উপলব্ধি ছিল জ্ঞান চর্চার মৌলিক যে প্রতিষ্ঠান তার সূতিকাগার অতি অবশ্যই পাঠাগার। সঙ্গত কারণে জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করতে গেলে সবার আগে পাঠাগার তৈরিই পরিস্থিতির ন্যায্যতা।

যেখানে নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধবনিতা সবাই নিঃসঙ্কোচে নির্দ্বিধায়, স্বাধীন চেতনায় জ্ঞানপিপাসু অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলতে লাইব্রেরির বিকল্প অন্য কিছু আসলেই নয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘লাইব্রেরি’ প্রবন্ধে আছে বিদ্যুৎকে মানুষ লোহার তার দিয়া বাঁধিয়াছে। কিন্তু কে জানিত শব্দকে নিঃশব্দের মধ্যে বাঁধা যাবে? সেটাই যখন বাস্তবে হলো জ্ঞানচর্চার আধার সাবলীলভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে পাঠস্পৃহা জাগিয়ে তুলতে যেন নিয়ামকের ভূমিকাই পালন করছে।

জ্ঞানপিপাসু ফরিদা ইয়াসমিন মনে করেছেন, এই পাঠাগার যেন হয় শুধু তরুণ প্রজন্ম নয়, সমাজের সর্বমানুষের মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয়ে জ্ঞান আহরণের পরম চাবিকাঠি হিসেবে আলোকের ঝর্ণাধারায় দ্যুতি ছড়িয়ে যাবে। শুধু পাঠ স্পৃহা নয় অর্জিত জ্ঞানের হরেক প্রাসঙ্গিক উপাদান যাতে প্রতিযোগিতামূলক হয় সেটাও এই বিশিষ্ট নারীর যুক্তি, বুদ্ধিতে সাড়া জাগায়।

এক সময় বিদ্যালয়ে বই পড়া এবং পাঠচক্রের আয়োজন থাকত। সময়ের নিত্য নতুন চাহিদায় আধুনিক অধ্যায় সংযোজন বহু ঐতিহ্যিক প্রাচীন সম্ভার যেন ধামাচাপা পড়ে আছে। তাকে আবারও চক্রাকারে জাগিয়ে তোলা পেছন ফেরা নয় বরং নতুন-পুরনের এক অবিমিশ্র যোগাযোগ যা আধুনিক শিল্প প্রযুক্তির যুগকেও মিলন গ্রন্থিতে পূর্ণ করে দেবে। 
অপরাজিতা প্রতিবেদক

×