ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

কন্যা জায়া জননী

নীলিমা জাহান

প্রকাশিত: ০১:২৬, ৩১ মে ২০২৪

কন্যা জায়া জননী

বর্তমান সমাজে অনেকেই নারীকে দুর্বল মনে করেন

বর্তমান সমাজে অনেকেই নারীকে দুর্বল মনে করেন।  কেউ  কেউ এ বক্তব্যকে যথার্থ মনে করেন। আবার  অনেকেই সমর্থন করেন না। এ বক্তব্য নিয়ে নানা জনের নানা ব্যাখ্যা থাকতে পারে। সে বিতর্ক অনেকদূরের। হয়তো এ বিতর্কেরও পরিসমাপ্তি হবে। তবে অনেক কাদা ছোড়াছুড়িও হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।  কিন্তু সহজভাবে কেউ বিবেচনা করলে নারীকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই। এর জ¦লন্ত প্রমাণ রয়েছে আমাদের সমাজে

সমাজে অনেকেই  নারীকে বহুরূপী বলে থাকেন। কেউ বহুরূপীকে ছলনাময়ী মনে করেন।  আমি এই বহুরূপী শব্দের সঙ্গে একমত নই। এর ভিন্ন অর্থও আছে । আমি বহুরূপী শব্দকে প্রত্যাখ্যান করে নানা রূপের পরিচয় তুলে ধরতে চাই। একজন নারী তার জীবনে নানা বয়সে ও সময়কালে নানা রূপে আবির্ভূত হন।

মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীতে আগমনের পর তার পরিচয় কন্যারূপে। শিশুকাল পেরিয়ে কৈশোরে বা যৌবনকালে তিনি বিয়ে করেন। আবির্ভূত হন স্ত্রী রূপে। নারী জীবনের প্রথম ধাপেই একজন স্ত্রী হিসেবে অনেক সময় পুরো সংসারের দায়িত্ব্ পালন করতে হয়। হঠাৎ  এমন পরিস্থিতিতে সেই নারী অনেক সময়ই তাল সামলাতে পারেন না। তবে হালও ছাড়েন না। হয়ত  হাল ছেড়ে দেবার সুযোগও নেই।

এই নারী কিছুদিনের মধ্যেই  সন্তান জন্ম দিয়ে মাতৃত্ব লাভ করেন। তখন তিনি  মমতাময়ী মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ধাপে ধাপে তার পরিচয় শাশুড়ি কিংবা অমুকের মা, অমুকের শাশুড়ি,অমুকের দাদি বা নানি । ক্ষেত্রবিশেষে পরিচয় ভিন্ন ভিন্ন রূপ নেয়। এটাই হচ্ছে একজন নারীর নানামুখী রূপ। এর সঙ্গে কারো দ্বিমত নেই নিঃসন্দেহে। তবে ছলনাময়ী নারীর ক্ষেত্রটা ভিন্ন। কেউ ছলনাময়ী হয়ে জন্মায় না। পরিবেশ, পরিস্থিতি সমাজ তাকে ঠেলে দেয় ছলনা ও চাতুরতার পথে। 
বর্তমান সমাজে অনেকেই নারীকে দুর্বল মনে করেন।  কেউ  কেউ এ বক্তব্যকে যথার্থ মনে করেন। আবার  অনেকেই সমর্থন করেন না। এ বক্তব্য নিয়ে নানা জনের নানা ব্যাখ্যা থাকতে পারে। সে বিতর্ক অনেকদূরের। হয়ত এ বিতর্কেরও পরিসমাপ্তি হবে। তবে অনেক কাদা ছোড়াছুড়িও হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

 কিন্তু সহজভাবে কেউ বিবেচনা করলে নারীকে দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই। এর জ¦লন্ত প্রমাণ রয়েছে আমাদের সমাজে। আমি এর আগের আমার একটি লেখায় তার প্রমাণ তুলে ধরেছিলাম। হয়ত অনেকের তা মনে নেই। আবারও আমি কিছু অংশ তুলে ধরছি।

গত ৮ মে অনুষ্ঠিত সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সুলতানা রাজিয়া মিলন ৫৫ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। তার পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী তার চেয়ে এক হাজারের কম ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সুলতানা রাজিয়া মিলন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে অনেকের কাছেই নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন।

সরাসরি ভোটে অংশগ্রহণ করে নিজেকে জনকল্যাণমূলক কাজের যোগ্য হিসেবে তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের সমর্থন পেয়েছেন।  ভোটের মাঠে সুলতানা রাজিয়ার আগমন হঠাৎ করেই হয়নি। অনেক লড়াই, সংগ্রাম, ত্যাগ ও কঠিন দুঃসময় পার করেছেন। কিন্তু পিছপা হননি। দমে যাননি।  ভোটের মাঠে, রাজনীতির মাঠে, সামাজিকতায় নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন।

তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে নিজে একবার ভাইস চেয়ারম্যান নিবাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছেন।  ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও দুটি সংসদ নির্বাচনে সরাসরি প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করেছেন। সামাজিকতায় এবং রাজনীতিতে তার অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। তবেই তিনি জনগণের ভোট পেয়েছেন,সমর্থন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

পাশাপাশি গত ২১ মে সিরাজগঞ্জের আরেক উপজেলা উল্লাপাড়ায়, উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সেলিনা মির্জা মুক্তি প্রতিদ্বন্দ্বী চার পুরুষ প্রার্থীকে ডিঙিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। 
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ৬৭ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করে ৮৩ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। 
এই দুই সংগ্রামী নারীর সফলতা আমাদের চোখের সামনে জ¦লজ¦ল করে ভাসছে। এই দুই নারী রাজধানী ঢাকার বাইরে জেলা শহরেরই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন।  লেখাপড়া করেছেন। তবে ঘরের কোণায় বসে থাকেননি। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সংগ্রাম করেছেন। সফলতা অর্জন করেছেন। আরও অনেক নারীর সফলতা আছ্ ে। নারীকে ঘরে বসে থাকলে অধিকার বা স্বাধীনতা কেউ হাতে তুলে দেবেন না।

অধিকার, স্বাধীনতা, সমাজ সেবার আকাক্সক্ষা কিংবা রাজনীতির সুযোগ নারীকেই অর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে পড়ালেখাও করতে হবে। রাজনীতি, সমাজনীতি নিয়ে লেখা বই প্রচুর পরিমাণ পড়তে হবে। জ্ঞান অর্জনের জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বই পড়ার লব্ধ জ্ঞান নিয়ে, সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যারা এগিয়ে এসেছেন, মাঠে থেকেছেন, সংগ্রাম করেই তারা  সফলতা অর্জন করেছেন। তবে নারীর এগিয়ে যাবার পথে নানা ষড়যন্ত্র, প্রতিকূলতা, অপবাদ থাকে।

চলার পথে এসব কাঁটার মতো বিঁধবে।  তাতে ভয় পেলে চলবে না। নিজেকে স্বচ্ছ থাকতে হবে, সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে । তবে সফলতা অর্জন হবে। এ কথাও মনে রাখতে হবে নানা ষড়যন্ত্র, প্রতিকূলতা, অপবাদ শুধু নারীর ক্ষেত্রে নয় পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

×