ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা পেতে বাদীর বিরুদ্ধে যেসব আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ১৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:৫০, ১৩ জুন ২০২৫

হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা পেতে বাদীর বিরুদ্ধে যেসব আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে

আপনার বিরুদ্ধে কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলা করে, আপনাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলে, তাহলে কি আপনি চুপচাপ সহ্য করবেন? না। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি এবং ফৌজদারী কার্যবিধির আইনি বিধান অনুসরণ করে আপনি সেই মিথ্যা মামলার বাদীর বিরুদ্ধেই নিতে পারেন শক্ত পদক্ষেপ। এমনকি তাকে জেল, জরিমানা এবং ক্ষতিপূরণের আওতায়ও আনা সম্ভব।

কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আপনাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসান, এবং আপনি যদি সেই মামলায় অব্যাহতি পান, আদালত কর্তৃক খালাসপ্রাপ্ত হন বা তদন্ত শেষে ‘ফাইনাল রিপোর্ট’-এ আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়া যায়, তাহলে সেই মামলা “মিথ্যা” প্রমাণিত হয়।এই অবস্থায় আপনি “বাদী” অর্থাৎ মামলাকারীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারেন। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে ‘ফলস প্রসিকিউশন’-এর অভিযোগ এনে জেল-জরিমানার আবেদন জানাতে পারেন।

কখন দায়ের করবেন মানহানির মামলা?
মিথ্যা মামলায় আপনি অব্যাহতি পাওয়ার পরই কেবল আপনি বাদীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। যদি ম্যাজিস্ট্রেট আপনার অভিযোগে ব্যবস্থা না নেন, তাহলে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৭৬(বি) ধারায় সংশ্লিষ্ট দায়েরা আদালতে আপিল করা যাবে। প্রয়োজনে রিভিশনের জন্য হাইকোর্টেও যাওয়া যেতে পারে।

ম্যাজিস্ট্রেটের ‘ম্যাজিক্যাল পাওয়ার’ কী বলে?
ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অভিযোগ পাওয়ার পর ফৌজদারী কার্যবিধির ২৫০ ধারায় বাদীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। ক্ষতিপূরণ না দিলে ৩০ দিনের কারাদণ্ডও হতে পারে। একইভাবে ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৫(৫) ধারায় ৬ মাসের জেল বা ৩ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯৫ ধারায় নিজে বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন অথবা অভিযোগ আমলে নিয়ে তা প্রধান বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠাতে পারেন।

দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় বলা আছে, মিথ্যা মামলা দায়েরের জন্য দায়ী ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনা যাবে।
দণ্ডবিধির ১৯৩ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্যদানকারীর জন্য ৭ বছরের কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। আর সেই মিথ্যা সাক্ষ্যে যদি নিরীহ আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে সাক্ষ্যদানকারীও দণ্ডবিধির ১৯৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য হতে পারেন।

যদি কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরকারী ব্যক্তি কোনো শিশুকে টার্গেট করেন (১৮ বছরের নিচে), তাহলে শিশু আইন ২০১৩-এর ৮৩ ধারায় তার বিরুদ্ধে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে।গ্রাম আদালত আইন ২০০৬-এর ৯(ক) ধারায় মিথ্যা অভিযোগ প্রমাণিত হলে ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনেও যদি মিথ্যা মামলা দায়ের হয়, যেমন যৌতুক বা ধর্ষণের মামলা, এবং তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তাহলে আইনটির ১৭ ধারায় ৭ বছরের জেলের বিধান রয়েছে।

মিথ্যা মামলার ভয়াবহতা শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যক্তিজীবনেই নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থার ওপরও গুরুতর প্রভাব ফেলে। তাই নিজেকে রক্ষা করতে হলে জানতে হবে আইনের সঠিক ব্যবহার।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/yte44r89

আফরোজা

×