কানাডার অন্টারিও প্রদেশে কোকেন পাচারের অভিযোগে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে সাতজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। প্রায় এক বছরের তদন্তের পর ‘প্রজেক্ট পেলিক্যান’ অভিযানে এই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অভিযানে ৪৭৯ কেজি কোকেন জব্দ করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য কানাডিয়ান ডলার ৫ কোটিরও বেশি, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০০ কোটি।
পিল আঞ্চলিক পুলিশের বরাতে জানা গেছে, গ্রেটার টরন্টো এলাকায় (জিটিএ) যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোকেন পাচারের চেষ্টা করছিল অভিযুক্তরা। এটাই সংস্থাটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাদক জব্দের ঘটনা। তদন্তে উঠে এসেছে, এই মাদক চক্রের সঙ্গে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ এবং খালিস্তানপন্থিদের সংযোগ রয়েছে।
তদন্তে আরও জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে বাণিজ্যিক ট্রাকিং রুট ব্যবহার করে এই মাদক পাচার চলত। মেক্সিকান কার্টেল এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ড্রাগ ডিলারদের সঙ্গেও এই চক্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
২০২৪ সালের জুনে এই চক্রের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। নভেম্বরের দিকে পিল আঞ্চলিক পুলিশ কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (CBSA), ইউএস ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং ইউএস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনসের সহায়তায় এই পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তি, ট্রাক কোম্পানি ও গুদাম চিহ্নিত করে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে কানাডা সীমান্তে দুটি ট্রাক থেকে মোট ১৭৭ কেজি কোকেন জব্দ করে কর্তৃপক্ষ। অ্যাম্বাসেডর ব্রিজ এবং ব্লু ওয়াটার ব্রিজ দিয়ে পাচারের সময় এই মাদক জব্দ করা হয়। অভিযানে আরও জানা যায়, গ্রেটার টরন্টো অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন স্টোরেজ স্পটেও অভিযান চালিয়ে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পিল পুলিশ জানিয়েছে, ৬ জুন পর্যন্ত মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মোট ৩৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত গুরুতর অপরাধ।গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন:
হাও টমি হুয়েন (২৭), মিসিসাগা,ফিলিপ টেপ (৩৯), হ্যামিলটন,সাজগিত যোগেন্দ্ররাজা (৩১), টরন্টো,মনপ্রীত সিং (৪৪), ব্র্যাম্পটন,অরবিন্দর পাওয়ার (২৯), ব্র্যাম্পটন,করমজিত সিং (৩৬), ক্যালেডন,গুরতেজ সিং (৩৬), ক্যালেডন,সরতাজ সিং (২৭), কেমব্রিজ,শিব ওঙ্কার সিং (৩১), জর্জটাউন।তাদের সবাইকে ব্র্যাম্পটনের অন্টারিও কোর্ট অব জাস্টিসে জামিন শুনানির জন্য হাজির করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আন্তর্জাতিক মাদক চক্র দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে কানাডা। এর আগেও ‘প্রজেক্ট ক্যাসটিলো’ অভিযানে ৮৩৫ কেজি কোকেন জব্দ করা হয়েছিল, যার বাজারমূল্য ছিল ৮৩ মিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ‘কানাডার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাদক ল্যাব’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার সময় ভারতীয় বংশোদ্ভূত গগনপ্রীত রন্ধাওয়াকে গ্রেপ্তার করে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ। একই মাসে গুরবরুণ মাথারু নামের আরেক ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে ৫০ কেজি কোকেন পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
এইসব ঘটনায় স্পষ্ট হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের সঙ্গে ভারতবিরোধী রাজনৈতিক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জটিল যোগসূত্র রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কানাডা প্রশাসনের দৃষ্টি আরও কঠোর হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
সূত্র:https://tinyurl.com/36a98jf3
আফরোজা
