ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

এবার জেগেছে মিশর, গাজার মানুষকে সরাতে দেবে না

প্রকাশিত: ১৭:২২, ৬ আগস্ট ২০২৫

এবার জেগেছে মিশর, গাজার মানুষকে সরাতে দেবে না

ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে গাজা ইস্যুতে ঘুম ভেঙেছে মিশরের। দেশটির প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি সরাসরি বলেছেন, গাজায় এখন কেবল অনাহারে মৃত্যু নয়, বরং সুপরিকল্পিতভাবে চলছে ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা। এটি আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কিংবা জিম্মিদের মুক্তির জন্য সীমাবদ্ধ নেই—বরং এটি পরিণত হয়েছে একটি জাতিগনহত্যার ষড়যন্ত্রে। তবে এই প্রেক্ষাপটে কায়রো কখনোই ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূমি গাজা থেকে সরিয়ে অন্যত্র পাঠানোর চক্রান্তে সায় দেবে না বলেও জোর দিয়ে জানিয়েছেন সিসি।

গাজায় যে দুর্ভিক্ষ আর গণহত্যা চলছে তা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হলেও, এতদিন পর্যন্ত এই ইস্যুতে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছিল মুসলিম দেশ মিশর। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকার সঙ্গে মিশরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই মূলত এই নীরবতার কারণ, যা সত্য চাপা দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তবে এর বদলে ‘পুরস্কার’ও পেয়েছেন সিসি।

সম্প্রতি কায়রোয় ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি বলেন, “গাজার যুদ্ধ এখন আর কেবল রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন বা জিম্মিদের মুক্তির জন্য সীমাবদ্ধ নেই। এই যুদ্ধ এখন আর কোন যুক্তি বা ব্যাখ্যার মধ্যেও পড়ে না। এটি এখন রূপ নিয়েছে অনাহার ও গণহত্যার যুদ্ধে। ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য চলছে পরিকল্পিত গণহত্যা।”

মিশরের প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য এসেছে এমন এক সময়, যখন ফিলিস্তিন ইস্যুতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পশ্চিমা বিশ্ব। তবু বন্ধু ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে এখনো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসও এখনো দখলদার ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, প্রত্যাখ্যান করেছে গণহত্যা থামানোর আহ্বান। এমন পরিস্থিতিতেই গাজা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন সিসি।

এদিকে গাজায় ভয়াবহ ত্রাণ সংকটের কারণে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ। খাবার না পেয়ে একের পর এক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন নিরীহ ফিলিস্তিনিরা। সীমান্তে মিশরের নিষ্ক্রিয়তাকেই এর জন্য দায়ী করছেন অনেকেই। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে সিসি বলেন, “মিশর কখনোই গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং যতদিন সীমান্তে ইসরাইলি সেনারা ছিল না, ততদিন নির্বিঘ্নেই ত্রাণ প্রবেশ করেছে। তবে ২০২৪ সালের মে মাস থেকে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। বর্তমানে অন্তত ৫০০০ ত্রাণবাহী ট্রাক সীমান্তে অপেক্ষায় রয়েছে।”

ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে মিশরে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করানোর একটি গোপন পরিকল্পনা গাজায় আগ্রাসনের পর থেকেই সামনে আসে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের যৌথ স্ট্র্যাটেজির অংশ বলে ধারণা। তবে সিসির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—এমন পরিকল্পনায় কখনোই সায় দেবে না কায়রো। বরং আল জাজিরার বরাতে সিসি জানিয়েছেন, “যেকোনো সময় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে মিশর প্রস্তুত। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে সরিয়ে দেওয়া কখনোই মেনে নেবে না মিশর।”

শেখ ফরিদ 

×