
ছবি: সংগৃহীত
হুথির শব্দটাই এখন ইসরাইলের জন্য আতঙ্কজাগানিয়া। ধারাবাহিক আক্রমণে ইসরাইলকে মহাবিপদে রেখেছে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রই হুথির প্রধান শক্তির জায়গা। এবার সেই মুকুটে নতুন পালক যোগ করেছে হুথি। আর তাতেই ইসরাইল চক্ষু চরক গাছ। সদ্য ঘোষিত ‘সায়াদ’ নামক দীর্ঘপাল্লার নৌ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার মধ্য দিয়ে হুথি তার সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকেও আরো উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
হুথি দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সায়াদ ক্ষেপণাস্ত্র এখন থেকে সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুতভাবে আক্রমণ করতে পারে। ফলে লোহিত সাগর, আরব সাগর এবং ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে হামলা চালানো হুথির জন্য এখন ওয়ান টুরর ব্যাপার। বোতাম টিপলে পুরে ছাই হবে ইসরাইলি বাণিজ্য জাহাজ, মার্কিন রণতরীর কপালেও শনির দশা।
সামরিক সূত্রে জানা যায়, সায়াদ ক্ষেপণাস্ত্র অত্যাধুনিক রাডার ফাঁকি দেওয়ার প্রযুক্তিতে তৈরি। এটি চলমান লক্ষ্যবস্তুতে নিখুতভাবে আঘাত হানতে পারে। স্বল্প উচ্চতায় সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ায় এটিকে শনাক্ত করাও অত্যন্ত কঠিন। ফলে শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানী সানার আল সাবমি স্কয়ারে অনুষ্ঠিত এক সামরিক কুচকাওয়াজে প্রথমবারের মতো সায়াদ ক্ষেপণাস্ত্র জনসম্মুখে প্রদর্শিত হয়। তখন বলা হয়েছিল, এটি একটি মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, যা স্থির ও চলমান উভয় প্রকার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
সায়াদ ক্ষেপণাস্ত্রটি ৬.৮ মিটার লম্বা ও ০.৫ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট। ২০০ থেকে ৩০০ কেজি বিস্ফোরক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই ক্ষেপণাস্ত্র একটি বড় সামরিক জাহাজ বা স্থাপনায় ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে। এটি মোবাইল গ্রাউন্ড লঞ্চার থেকে ছোড়া হয়। ভবিষ্যতে সাগর থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য সংস্করণও চালু করার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।
এই ক্ষেপণাস্ত্রের স্যাটেলাইট ও ইনার্শিয়াল গাইডেন্স প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই প্রযুক্তি কোথা থেকে এসেছে তা এখনো অজানা। এরই গতি ধরা হয়েছে মার্ক ৭ থেকে ৯ পর্যন্ত। অর্থাৎ সাবসনিক। তবে এর নিচু উড়ান একে প্রতিরোধ করা কঠিন করে তোলে।
২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়া সৌদি আগ্রাসনের পর ইয়েমেন ধাপে ধাপে নিজের সামরিক প্রযুক্তি শক্তিশালী করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের কাছে ছিল সোভিয়েত যুগের পুরনো সিস্টেম। কিন্তু ২০১৭ সালে কুদস ওয়ান ক্ষেপণাস্ত্রের আবির্ভাবের পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়।
সায়াদ তার পূর্বসূরী কুদস ওয়ান, সাম্মাদ সিরিজ এবং অন্যান্য সাধারণ এন্টি-শিপ ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় অনেক বেশি পাল্লাধারী, নিখুত এবং বিধ্বংসী। যেমন সাম্মাদ ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার হলেও সায়াদ পৌঁছে যায় ৮০০ থেকে ১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
হুথি জানিয়েছে, তাদের নিজস্ব ভূগর্ভস্থ কারখানায় প্রতিবছর ডজনখানি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি হচ্ছে। বর্তমান পর্যন্ত তাদের কাছে ১০০ থেকে ১৫০ টির মত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সায়াদ ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ইয়েমেন শুধু নিজের ভূখণ্ড রক্ষা নয়, বরং শত্রুর সাগরজুড়ে ঘোরাফেরা করা বাণিজ্যিক ও রণতরী জাহাজগুলোকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। এখন থেকে ওই জাহাজগুলো সমুদ্রপথে আর নিরাপদ নয়। এই ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তনের সম্ভাবনাও সৃষ্টি করেছে।
ইরানি কাদিয়ে-৩৮০ ক্ষেপণাস্ত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সায়াদ প্রমাণ করছে যে ইয়েমেন এখন শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বরং কার্যকর প্রতিরোধ করতেও সক্ষম হয়ে উঠেছে।
শেখ ফরিদ