ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

গাজায় দুর্ভিক্ষ: ৩ বছর বয়সী শিশুর একমাত্র চাওয়া একটুকরো রুটি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ২৫ জুলাই ২০২৫

গাজায় দুর্ভিক্ষ: ৩ বছর বয়সী শিশুর একমাত্র চাওয়া একটুকরো রুটি

ছবি: সংগৃহীত

গাজায় এখন দুর্ভিক্ষ কেবল কোনো আশঙ্কা নয়, এটি প্রতিদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুরা ঘুম থেকে উঠে বিস্কুট চায়, যা বাসায় নেই। একজন মা তাঁর সন্তানকে বোঝাতে পারেন না কেন রুটি নেই।
আর পুরো দুনিয়া কেন এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে চুপ করে আছে।

তাকওয়া নামের এক তরুণী তাঁর বড় বোন তাসনিম ও তাসনিমের দুই সন্তান নূর ও এয্‌য আল-দিনের কথা বলছিলেন। তিন বছর বয়সী নূর আগে চকোলেট আর বিস্কুট খুব ভালোবাসতো। এখন সে সংখ্যা ও অক্ষর শিখেছে। প্রতিদিন সে তার মাকে বলে, “১৫টা বিস্কুট আর চকোলেট কিনে দাও।” কারণ ১৫ হলো তার জানা সবচেয়ে বড় সংখ্যা। সে ভাবে, এতগুলো হলে পেট ভরবে।

আর ছোট ভাই এয্‌য আল-দিনের বয়স দেড় বছর। তার জীবন শুরু থেকেই যুদ্ধ আর ধ্বংস দেখে গেছে। সে কখনো ভালো খাবার দেখেনি। সে শুধু বলতে পারে “ওব্জা!” মানে রুটি।

তাকওয়া বলছেন, “ও শুধু রুটি চায়। সে জানেই না কীভাবে অন্য কিছু চাওয়া যায়।”

সম্প্রতি এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে এক ব্যক্তি কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁর পরিবারের সাতজন না খেয়ে ছিল। এরপর একদিন তাদের তাঁবুতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলা হয়। এই পরিবারগুলো অর্থের অভাবে নয়, খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছে।

আজকের গাজায় কোটি টাকাও থাকলে আপনি একটি রুটিও কিনতে পারবেন না। গাজা আগে স্ট্রবেরি ইউরোপে রপ্তানি করত। স্থানীয়ভাবে দুধ, পনির, মাছ সব উৎপাদন হতো। এক সময় ২৫ কেজির বিশাল তরমুজ বিক্রি হতো মাত্র ১৮ শেকেলে (৫ ডলার)। এখন সেই একই তরমুজ, যদি পাওয়া যায়, তার দাম ২৫০ ডলার। মাছ ধরার ওপর নানা বিধিনিষেধ ছিল, তবু গাজার মানুষ মাছ খেত। এখন সেই সমুদ্রও যেন নীরব।

তাকওয়া বলেন, “তুর্কি কফির অনেক প্রশংসা আছে। কিন্তু গাজার মাজাজ কফির মতো স্বাদ আপনি কোথাও পাবেন না। এখন সেটাও স্মৃতি হয়ে গেছে।”

তাকওয়া নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তিনি ও তাঁর সহপাঠীরা অনলাইনে পরীক্ষা দিচ্ছেন বোমার শব্দ, ক্ষুধা আর আতঙ্কের মধ্যে।

একদিন পরীক্ষা চলাকালীন পাশের বাড়িতে বোমা পড়ে। তিনি বলছিলেন, “আমি এক মুহূর্তে ভাবছিলাম কতটা ক্ষুধার্ত, আর পর মুহূর্তেই অনুভূতিহীন হয়ে গিয়েছিলাম। আমি তখন দৌড়াইনি, পড়তেই বসে ছিলাম। কারণ আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই।”

তাকওয়ার বন্ধুরা প্রতিদিন শুধু এই কথাগুলোই বলে: “আজ কী খেয়েছো?”, “মাথা ঘুরছে?”, “ক্ষুধায় মন বসছে না।”

তাকওয়ার ভাষায়, “আমরা রাত্রে একবেলা খেতে পারি ভাত, স্যুপ বা টিনজাত সিম। যেগুলো অন্যের ঘরে অতিরিক্ত খাবার, আমাদের কাছে তা বিলাসিতা।”

শিশুরা বুঝে না বাজার নেই, দাম বেড়েছে। তারা শুধু জানে, তারা ক্ষুধার্ত। তাকওয়া বলেন, “গাজার মানুষ দুর্ঘটনার শিকার নয়, আমাদের ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা যুদ্ধাপরাধ।”

তাঁর আহ্বান, সীমান্ত খুলে দাও। খাবার ঢুকতে দাও। ওষুধ আসতে দাও। সহানুভূতি নয়, প্রয়োজন ন্যায্যতা। আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারি তবে তার আগে, দয়া করে আমাদের না মেরে খেতে দাও।”

মুমু ২

×