
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ধর্মস্থল ৮০০ বছরের পুরনো পবিত্র শহর, সম্প্রতি উঠে এসেছে দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ অভিযোগের কেন্দ্রে। এক প্রাক্তন সাফাই কর্মী আদালতে শপথ করে জানিয়েছেন, তিনি ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে শত শত মৃতদেহ মাটিচাপা দিয়েছেন যার মধ্যে বহু নারী, কিশোরী এবং শিশু ছিল। তার দাবি, এদের অনেককেই ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছিল।
ভয়ঙ্কর স্বীকারোক্তি
৪৮ বছর বয়সী ওই দলিত ব্যক্তি, যিনি বর্তমানে রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষিত সাক্ষী, জানিয়েছেন, তাকে জীবননাশের হুমকি দিয়ে জোর করে মৃতদেহ মাটি চাপা দিতে বাধ্য করা হতো। না মানলে তাকেও জীবন্ত কবর দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। তিনি বলেন, "আমি আর এই পাপের বোঝা বইতে পারছি না। আমি নিজেই কিছু কবর খুঁড়ে কঙ্কাল বের করে পুলিশের কাছে প্রমাণ পেশ করেছি।"
মন্দির শহরে গোপন গণকবর?
ধর্মস্থল মন্দিরে প্রতিদিন প্রায় ১০,০০০ তীর্থযাত্রী আসেন। মন্দিরটি হেগগড়ে পরিবারের হাতে পরিচালিত এবং ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। অভিযোগকারী জানান, মন্দির চত্বর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় তিনি বহু মৃতদেহ কবর দিয়েছেন কিংবা পুড়িয়ে ফেলেছেন, তেল ঢেলে দগ্ধ করে প্রমাণ লোপাট করা হতো।
তিনি বলেন, “অনেক মৃতদেহ ছিল কাপড় ছাড়া। যৌন নিপীড়নের স্পষ্ট চিহ্ন, অ্যাসিডে পোড়া দাগ, গলায় দড়ির ছাপ সবই ছিল।” একবার এক স্কুলপড়ুয়া মেয়ের মৃতদেহ তাকে কবর দিতে বলা হয়েছিল, যার শরীরে ছিল শুধু স্কুল ইউনিফর্মের শার্ট অন্য সব কাপড় ছেঁড়া বা অনুপস্থিত।
SIT গঠন, তদন্ত শুরু
দেশজুড়ে চাপ ও প্রতিবাদের মুখে কর্ণাটক সরকার ইতিমধ্যেই একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করেছে। আদালতে দেওয়া শপথপত্রে অভিযুক্ত স্থানগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন ওই সাফাই কর্মী। অনেক গণকবরের স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে, শিগগিরই সেগুলোর মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু হবে।
মানসিক যন্ত্রণা ও পলায়ন
২০১৪ সালে তার পরিবারের এক কিশোরী সদস্য যৌন হয়রানির শিকার হলে তিনি ধর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর ১২ বছর আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু বিবেকের দংশনে শেষমেশ মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নেন।
খোঁজ করছেন নিখোঁজের পরিবারগুলো
২০০৩ সালে নিখোঁজ হওয়া মেডিকেল শিক্ষার্থী অনন্যা ভাটের মা সুজাতা ভাট নতুন করে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, “আমার মেয়ের হাড্ডি খুঁজে দিন, যেন অন্তত তাকে শেষকৃত্য দিতে পারি।”
মন্দির কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
ধর্মস্থল মন্দির কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা "সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত" চায়। তবে অতীতে ২০১২ সালে সাওজন্যা নামের কিশোরীর ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায়ও মন্দিরের উচ্চপদস্থদের নাম উঠে এসেছিল। সেই মামলাও আজও অমীমাংসিত।
মানবাধিকারকর্মীদের ভাষ্য
মানবাধিকার আইনজীবী এস. বালন বলেন, “স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের ইতিহাসে এত ভয়াবহ গণধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ আর নেই। এটি এক নীরব গণকবরের ইতিহাস।”
Jahan