
ছবি: সংগৃহীত
গুজরাটের আহমেদাবাদে এক তরুণী ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে খুলেছেন একটি 'জিরো ওয়েস্ট ক্যাফে', যার নাম ক্যাফে আরম্ভ। এর পেছনে রয়েছেন নিষ্ঠা চৌহান, যিনি মাত্র ২৭ বছর বয়সে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ সফল ক্যারিয়ার ছেড়ে গ্রামীণ খাদ্য ও পরিবেশ রক্ষায় মনোনিবেশ করেন। এখন তার ক্যাফে মাসে প্রায় ১২ লাখ টাকা আয় করে এবং প্রতিবছর ৪৭ টন প্লাস্টিক ও কার্বন নির্গমন হ্রাস করে।
নিষ্ঠা ছোটবেলা থেকেই তার দাদার মাধ্যমে প্রাচীন শস্যের গুরুত্ব বুঝেছেন। তবে আধুনিক শিক্ষা ও ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় প্রবেশ করে একসময় এই শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। কোভিড-১৯ মহামারির সময় তিনি উপলব্ধি করেন, প্রকৃত সুস্থতা ও পরিবেশ-সচেতনতা আনতে হলে খাদ্য-সংস্কৃতির দিকেই ফিরে যেতে হবে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে তিনি আহমেদাবাদের থলতেজ অঞ্চলে পরিবেশ শিক্ষা কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে “ক্যাফে আরম্ভ” শুরু করেন। এই ক্যাফের প্রতিটি পদ তৈরি হয় স্থানীয়ভাবে চাষ করা প্রাচীন শস্য দিয়ে—যেমন রাগি ডোসা, মিলেট মোমো, রাগি পাভ বান ইত্যাদি। খাবার পরিবেশিত হয় কাচের পাত্রে; একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক একেবারেই নিষিদ্ধ।
পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ হিসেবে এখানে এসি নেই, রয়েছে ওয়াটার কুলিং ও মিস্ট ফ্যান। টিস্যু ব্যবহার না করে রাখা হয় রিইউজেবল তোয়ালে।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এটি শুধু একটি ক্যাফে নয়, একটি শেখার কেন্দ্র। এখান থেকে এখন পর্যন্ত ২,০০০-এরও বেশি শিশু অংশ নিয়েছে হেলদি ইটিং ও পরিবেশ সচেতনতার ওয়ার্কশপে। শিশুদের শেখানো হয় কীভাবে সবজি চাষ করতে হয়, মাটি ছুঁয়ে কীভাবে খাদ্যের উৎস বোঝা যায়, মিলেট দিয়ে সুস্বাদু খাবার বানানো যায়। তারা নিজের হাতে স্যালাড, মিলেট স্ন্যাকস বানিয়ে খায়। এই সব কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের খাদ্যাভ্যাসেও আসে পরিবর্তন—চিপসের বদলে মিলেট খিচুড়ি চায় তারা।
নিষ্ঠার লক্ষ্য: শিশুদের ‘মাইন্ডফুল ইটিং’ শিখিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। তার কথায়, “খাদ্য হচ্ছে পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আমরা যদি শিশুদের সেই সম্পর্ককে সম্মান করতে শেখাতে পারি, তাহলে গোটা পৃথিবী বদলে দিতে পারব।”
এই উদ্যোগে বর্তমানে দুটি শাখা চালু রয়েছে এবং স্থানীয় কৃষকদের থেকে সরাসরি শস্য কিনে তাদের অর্থনৈতিকভাবে সহায়তাও করা হচ্ছে।
মুমু ২