
ছবি: সংগৃহীত।
ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইন্দোনেশিয়ার খ্যাতনামা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মারওয়ান আল সুলতান ও তার পরিবার নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। এই ঘটনার পর দেশটির সংসদ সদস্যরা এটিকে “পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড” আখ্যা দিয়ে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
ডা. মারওয়ান আল সুলতান ছিলেন ফিলিস্তিনের উত্তর গাজার বেত লাহিয়ায় অবস্থিত ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালের পরিচালক। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের ধারাবাহিক আগ্রাসনের পরও তিনি চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছিলেন, যদিও ওই হাসপাতাল ছিল হামলার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
জানা যায়, বুধবার (২ জুলাই) রাতে বেত লাহিয়ায় তার অস্থায়ী বাসস্থানে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানে, যাতে ডা. মারওয়ান, তার স্ত্রী ও সন্তান নিহত হন। একমাত্র জীবিত থাকা সদস্য খুননা লুবনা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, "মিসাইলটি সরাসরি ঘরের সেই কক্ষে আঘাত হানে, যেখানে তিনি ছিলেন। এটি একটি পরিকল্পিত হামলা ছিল।”
এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় পর্যায়ে শোক ও ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। দেশটির সরকার আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ইসরায়েলি বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে বলেছে—"এটি একটি মানবতা বিরোধী অপরাধ, যার আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া জরুরি।"
ইন্দোনেশিয়ার সংসদের আন্তঃপার্লামেন্টারি সহযোগিতা কমিটির সদস্যরা জাতিসংঘ, আইসিসি ও ওআইসি’র প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন— “ইসরায়েল যেভাবে চিকিৎসকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে, তা শুধু যুদ্ধাপরাধ নয় বরং মানব সভ্যতার চরম লঙ্ঘন। এর বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।”
ইন্দোনেশিয়ার মেডিকেল ইমারজেন্সি রেসকিউ কমিটি (MER-C) এবং গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ হামলাকে “পূর্বপরিকল্পিত হত্যা” বলে অভিহিত করেছে। তারা দাবি করেছে, হাসপাতাল পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একজন বিদেশি নাগরিক ও মানবিক চিকিৎসকের উপর এই হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
ডা. মারওয়ান গাজায় তার চিকিৎসক জীবনে বহুবার জীবন ঝুঁকিতে রেখেছেন। কিন্তু কখনোই নিজের দায়িত্ব থেকে সরে যাননি। একের পর এক বিমান হামলার মধ্যেও তিনি রোগীদের সেবা দিয়ে গেছেন, হাসপাতালের জরুরি সংস্কার নিজের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করেছেন। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি একজন চিকিৎসক ও মানবিক সেবক হিসেবেই দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
নুসরাত