
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোনো নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি। বরং কিছু ক্ষেত্রে পুরোনো নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ভেঙে নতুন ছদ্ম কোম্পানির মাধ্যমে রাশিয়ায় প্রবেশ করছে নিষিদ্ধ চিপ, ড্রোন পার্টস ও কোটি কোটি ডলারের অর্থ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নিষ্ক্রিয়তা যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে মস্কো চালাচ্ছে আরও ভয়ঙ্কর ড্রোন ও মিসাইল হামলা।
নিষেধাজ্ঞা নেই, কিন্তু চিপ যাচ্ছে রাশিয়ায়!
নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হংকং ও চীনের ১৩০টির বেশি কোম্পানি এখন সরাসরি রাশিয়ায় নিষিদ্ধ চিপ বিক্রি করছে—যেগুলোর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকার কথা। এদের মধ্যে হংকং ভিত্তিক ‘HK GST Limited’ এমন সব চিপ বিক্রি করছে যা রাশিয়ার ‘Kh-101’ মিসাইল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি এই মিসাইল কিয়েভে হামলা চালিয়ে ১০ জন বেসামরিক নাগরিক হত্যা করেছে।
এই কোম্পানিগুলোর অনেকের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ‘ChipsX’ ও ‘Carbon Fiber Global’-এর মতো প্রতিষ্ঠান, যারা নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে রাশিয়ায় পণ্য পাঠিয়েছে। যদিও Carbon Fiber Global এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ‘হাত গুটিয়ে বসে থাকা’ নিয়ে উদ্বেগ
বাইডেন প্রশাসন ২০২২-২৪ পর্যন্ত গড়ে প্রতি মাসে ১৭০টির বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও, ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে এখন পর্যন্ত একটিও নিষেধাজ্ঞা আসেনি। উল্টো, এপ্রিল মাসে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ বিলিয়নিয়ার বরিস রোতেনবার্গের স্ত্রী কারিনা রোতেনবার্গের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। অথচ তিনি ছিলেন প্রথম দিকের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় থাকা একজন মার্কিন নাগরিক।
এছাড়া ২০২২ সালে গঠিত “KleptoCapture” টাস্কফোর্স—যারা রুশ অলিগার্কদের সম্পদ জব্দ করছিল—সে টাস্কফোর্সও বন্ধ করে দিয়েছে বিচার বিভাগ।
নিষেধাজ্ঞা তুলে রাশিয়ার পক্ষে সাফাই?
“রাশিয়ার ওপর চাপ তৈরি করতে ট্রাম্প কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না,” মন্তব্য করেছেন নিষেধাজ্ঞা নীতির বিশ্লেষক এডওয়ার্ড ফিশম্যান। তার মতে, “পুতিনের ওপর ট্রাম্প কোনোভাবেই প্রভাব বিস্তার করতে চান না।”
ইউরোপ নেতৃত্ব নিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে
যেখানে আগে নিষেধাজ্ঞায় নেতৃত্ব দিত যুক্তরাষ্ট্র, এখন সে দায়িত্ব নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে তৃতীয় দেশগুলোর মাধ্যমে রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দেওয়ার পথে সেভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে না তারা। ফলে ফাঁকফোকর গলিয়ে রাশিয়া পাচ্ছে যুদ্ধের রসদ।
অবশেষে কংগ্রেসে কড়া বিল
রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ও ডেমোক্র্যাট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথাল এক নতুন বিল উত্থাপন করেছেন, যাতে বলা হয়েছে—রুশ জ্বালানি কিনে এমন দেশগুলোর ওপর ৫০০% শুল্ক আরোপ করা হবে। এর আওতায় পড়বে চীন ও ভারতও। আইনটি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ইউক্রেনের যুদ্ধের ভারসাম্য ফেরাতে এটি ‘খুবই জরুরি’ বলে মন্তব্য করেছেন ব্লুমেনথাল।
Mily