
ছবি: সংগৃহীত
দুবাইয়ের অভিজাত জুমেইরাহ বিচ রেসিডেন্স (জেবিআর) এলাকায় বর্তমানে এক ভয়াবহ আবাসন সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যা এই অভিজাত কমিউনিটির স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
ড. ওয়াদ্দাহ শিবিব, জার্মান নাগরিক এবং দীর্ঘদিনের বাসিন্দা, এলাকাটিতে "চরম বিশৃঙ্খলা" সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি জেবিআরে বসবাস করছেন। এক সময়ের শান্তিপূর্ণ ও বিলাসবহুল আবাসিক এলাকা এখন রূপ নিচ্ছে অতিরিক্ত জনাকীর্ণ, হোস্টেল-আকারের বাসস্থানে।
৩০টি টাওয়ারে প্রায় ৭,০০০ অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে গঠিত এই অভিজাত এলাকা এখন যেন অস্থায়ী আবাসনে পরিণত হয়েছে। অনেক অ্যাপার্টমেন্ট মালিকের অনুমতি ছাড়াই একাধিক কক্ষবিশিষ্ট ফ্ল্যাটে হোস্টেল তৈরি করা হচ্ছে।
ড. শিবিবের ভাষায়, অনেক ৩ বা ৪ কক্ষবিশিষ্ট অ্যাপার্টমেন্টে রাতপ্রতি মাত্র ৫০ থেকে ১০০ দিরহামে রুম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। পরিবার উপযোগী অ্যাপার্টমেন্টে এখন ৫০-৬০ জন পর্যন্ত মানুষ থাকছে, অনেক জায়গায় কৃত্রিম দেয়াল দিয়ে অতিরিক্ত কক্ষ বানানো হচ্ছে।
"আমি নিজ চোখে দেখেছি, একটি রুমে ১০ জন ঘুমাচ্ছে, অন্যরা বসার ঘরে। লিফট এমনিতেই জনাকীর্ণ থাকে, একতলা থেকে উপরে উঠতেই ৩০ মিনিট লেগে যায়," বলেন তিনি।
এই জনাকীর্ণতার ফলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। লিফট প্রায়শই অচল, আবর্জনায় ভর্তি এবং দুর্গন্ধযুক্ত। সাধারণ স্থানে ধূমপান সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা পরিবারবান্ধব পরিবেশ নষ্ট করছে।
পরিচ্ছন্নতার বাইরে ড. শিবিব নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। "লিফট সচল থাকে না, নর্দমা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, নিয়মিত বহিরাগতদের আনাগোনা চলছে। এটা শুধু অসুবিধা নয়, বরং এক ভয়ানক নিরাপত্তা ঝুঁকি," বলেন তিনি।
তিনি আশঙ্কা করছেন, অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় দুর্ঘটনায় এই জনাকীর্ণ ভবনগুলো ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। এই হোস্টেল রূপান্তরের প্রভাব শুধু সামাজিক নয়, সম্পত্তির বাজারেও পড়েছে। ড. শিবিব প্রশ্ন তুলেছেন, "এই অবস্থায় কে এখানে ফ্ল্যাট কিনবে?" মালিকরা তাদের অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করতে পারছেন না, কারণ সম্ভাব্য ক্রেতারা ভবনের অবনত পরিবেশ দেখে পিছিয়ে যাচ্ছেন।
এই সমস্যা জেবিআর-এ সীমাবদ্ধ নয়। ডিসকভারি গার্ডেনস-এর মত এলাকাতেও একই অবস্থা। সেখানে একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দা জানান, "এক কক্ষবিশিষ্ট অ্যাপার্টমেন্টে এখন ১৮ জন থাকছে। আমি বিছানার জন্য ১,৭০০ দিরহাম দিচ্ছি। বাথরুম, ওয়াইফাই শেয়ার করতে হয়।"
এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে সরকারি অবকাঠামো, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, এমনকি জরুরি সেবা পর্যন্ত হিমশিম খাচ্ছে।
ড. শিবিবসহ বাসিন্দারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, হোস্টেল রূপান্তর রোধে আইন প্রয়োগ, নিরাপত্তা জোরদার, স্বল্পমেয়াদি ভাড়া প্ল্যাটফর্ম মনিটরিং এবং অবৈধ হোস্টেল পরিচালনায় কঠোর শাস্তি জরুরি। "স্বল্পমূল্যের আবাসনের প্রয়োজন আছে ঠিক, তবে এইভাবে নয়। আমরা দীর্ঘমেয়াদি বাসিন্দাদের জন্য আইনগত সুরক্ষা চাই," বলেন ড. শিবিব।
শহীদ