ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

ইসরাইল-ভারতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যেভাবে পরমাণু শক্তি অর্জন করে পাকিস্তান

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২২:৪৪, ২ জুলাই ২০২৫

ইসরাইল-ভারতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যেভাবে পরমাণু শক্তি অর্জন করে পাকিস্তান

ছবি: পাকিস্তানের পারমানবিক শক্তির জনক ড. আব্দুল কাদির খান। তার হাত ধরেই পাকিস্তান সপ্তম দেশ হিসেবে পারমানবিক শক্তি অর্জন করে

যাকে সিআইএর সাবেক পরিচালক জর্জ টেনেট ওসামা বিন লাদেনের মতো হুমকি ভাবতেন, যাকে মোসাদের সাবেক প্রধান আফসোস করে বলেছিলেন— "হত্যা করা উচিত ছিল", সেই মানুষটিই পাকিস্তানের কোটি মানুষের কাছে জাতীয় বীর। তিনি বিজ্ঞানী ড. আব্দুল কাদির খান, পাকিস্তানের পরমাণু শক্তির স্থপতি।

১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের হাতে পরাজিত হয়ে বাংলাদেশ হারায় পাকিস্তান। এই ক্ষত পাকিস্তানের হৃদয়ে গেঁথে যায়। এরপর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা দেন— “আমরা ঘাস খেয়ে থাকবো, তবুও পারমাণবিক বোমা বানাবো।”
এই ঘোষণাকে বাস্তব রূপ দেন আব্দুল কাদির খান।

১৯৩৬ সালে ভোপালে জন্ম নেওয়া কাদির খান পড়াশোনা করেন করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপে যান, জার্মানিতে মেটালার্জি পড়ে পরে যোগ দেন নেদারল্যান্ডসের ইউরেনকো নামক একটি পারমাণবিক প্রতিষ্ঠানে। সেখানেই তিনি পান সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তির জ্ঞান— যেটা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির মূল উপাদান।

১৯৭৪ সালে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার পর পাকিস্তানও গোপনে কর্মসূচি হাতে নেয়। কাদির খান ১৯৭৬ সালে দেশে ফিরে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘খান রিসার্চ ল্যাবরেটরি (KRL)’। গড়ে তোলেন সেন্ট্রিফিউজ ফ্যাক্টরি ও বিভিন্ন ফ্রন্ট কোম্পানি— বিশ্বের নজর এড়িয়ে যন্ত্রাংশ আনেন।

তার কর্মকাণ্ডে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে পশ্চিমা গোয়েন্দারা। ইসরায়েল চায় ভারতের সাথে মিলে পাকিস্তানের পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস করতে। ইন্দিরা গান্ধী শুরুতে আগ্রহ দেখালেও পরে পিছিয়ে আসেন। বারবার ষড়যন্ত্র, হত্যাচেষ্টা আর পশ্চিমা চাপের মুখে থেকেও থেমে যাননি ড. খান।

১৯৮৬ সাল নাগাদ পাকিস্তান প্রায় পূর্ণ পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করে। এরপর ১৯৯৮ সালে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার জবাবে পাকিস্তান বেলুচিস্তানের চাগাই পাহাড়ে ছয়টি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিশ্বকে জানিয়ে দেয়— পাকিস্তান এখন বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন ‘বিপজ্জনক মানুষ’, কিন্তু মুসলিম দুনিয়ার কাছে তিনিই প্রতিরোধের প্রতীক। পশ্চিমাদের আশঙ্কা সত্যি করে কিছু প্রযুক্তি আরব বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়ে।

ড. কাদির খান শুধু একজন বিজ্ঞানীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি জাতির আত্মমর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রতীক।

নুসরাত

আরো পড়ুন  

×